• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পর্ব-৪

পথশিশুদের আলো দেখাবে কে?

এস এম ফয়েজ

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৮ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৬:৩৩, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
পথশিশুদের আলো দেখাবে কে?

বাসা-বাড়ি হোটেল-রেস্টুরেন্ট কিংবা অনুষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট খাবারের দিকে লোলুপ নজর পথশিশু-কিশোরদের। রাজধানীর অলিগলি এবং ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রের অপেক্ষায় থাকে তারা। কেন এই পরিণতি তাদের? এরা কি জন্মগতভাবে অপরাধী?-মোটেই না।

পারিবারিক-সামাজিকভাবে অনাদরে বেড়ে ওঠা এই শিশু-কিশোরদের খোঁজে অপরাধীচক্র। পাকা করে তোলে নানা নষ্ট কাজে। কখনও রাজনৈতিক দলগুলোও এদের নানা কাজে ব্যবহার করে। আবার ভিন্নতাও রয়েছে। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা কিছু সংস্থা অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছে পথহারা অনেক শিশু-কিশোরকে। দেশে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে হালনাগাদ তথ্য নেই। প্রতিবছর কতজন শিশু এ পথে আসে সেই হিসাবও নেই।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-বিআইডিএসের গবেষণা উদ্ধৃত করে দুবছর আগেও গণমাধ্যম বলেছে, শুধু ঢাকা শহরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার পথশিশু রয়েছে। ইউনিসেফ ২০১৪ সালের এক হিসাবে বলেছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৪ জন পথশিশু রয়েছে সারাদেশে। সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম-সিপের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।

একই গবেষণায় বলা হয়, ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকে। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে আর ৩৩ শতাংশ পাহারাদারের কারণে। খোলা আকাশের নীচে ঘুমানোর পরও তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হয়। এসব টাকা নৈশপ্রহরী ও মাস্তানদের দিতে হয়। অনেক সময় পুলিশি নির্যাতন এবং গ্রেফতারেরও শিকার হয়। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ ‘অশ্লীল কথার শিকার' হয়৷ শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ২০ শতাংশ৷ সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় কন্যা শিশু। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷ আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার। তবে সব আতঙ্ক ছাপিয়ে ফুটপাতের জীবনে পাল্টা প্রতিরোধও তৈরি হয়, যার প্রমাণ পাওয়া কমলাপুরের ফুটপাতে। রাতে ফুটপাতে থাকতে ভয় করে কি-না, প্রশ্নে এক কিশোরীর স্পর্ধিত উত্তর, 'ভয় করবে কেন? লাঠি থাকে তো! মেরে তাড়িয়ে দিই।' কিন্তু এ লড়াই তো তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে থাকা ফুটপাতের মানুষের বিরুদ্ধে লড়া যায়।

কিন্তু গাড়িতে আসা কিংবা রাস্তার অজ্ঞাত লোকজন, যাদের আনাগোনা বাড়ে রাতের ফুটপাতে, তাদের সঙ্গে কি লড়া যায়? অনেক পথশিশু অচেনা মানুষের হাত ধরে হারিয়ে যায় এই শহর থেকে। আর পথে বসবাসকারী পরিবারগুলোর সঙ্গে কন্যাশিশুদের দেখা গেলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। তাদের তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় মানব পাচারকারী কোনো দলের কাছে কিংবা বাধ্য করা হয় অনৈতিক কাজে। বিভিন্ন চক্র এই পেশায় নিযুক্ত। তারা ওত পেতে থাকে সমাজের আনাচে-কানাচে। তাদের ক'জনের খবর রাখে সমাজ।

গেল বছর জিনিয়া নামের এক ফুল বিক্রেতা পথশিশুর হারিয়ে যাওয়া এবং উদ্ধারের ঘটনা গণমাধ্যমে বেশ আলোড়ন তোলে। কিন্তু একজন জিনিয়ার মতো দেশের লাখো পথশিশুর মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি অধরাই থেকে যাচ্ছে। ফুটফুটে ছোট্ট শিশু জিনিয়াকে এখন অনেকে চেনেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে ফুলের মতো এই শিশুর হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার গল্প এখন আর কারও অজানা নয়। ফুল বিক্রেতা জিনিয়া তার শৈশব বিক্রি করছে অন্ন জোগাতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নাজমা আক্তার লুপা তালুকদার নামে এক নারীর করাল থাবায় প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল জিনিয়া। এক সপ্তাহ পর অন্ধকার কঠিন থাবা থেকে সন্তানকে বুকে পেয়েও আতঙ্ক কাটেনি জিনিয়ার মায়ের। পথশিশুরা দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। বিশাল একটি জনগষ্ঠীকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে উন্নয়ন অসম্ভব।  

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: