এখনই সতর্ক না হলে মহাবিপদ

বছরের প্রথম দুই মাস করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় আশাবাদী হয়ে উঠেছিলো দেশের জনগণ। দৈনন্দিন জীবনে ফিরেছিলো প্রাণ। তবে গত কয়েকদিন করোনা সংক্রমণের যে অবস্থা তা নিশ্চিতভাবেই খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রতিদিনই হাজারের ওপরে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। মৃত্যু হারও বেড়ে গেছে।
রোববার (১৪ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম সতর্ক করে বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়িভাবে না মানলে সামনে বড় বিপদ আসতে পারে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইতালিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরিমধ্যে নতুন করে স্কুল, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কমে যাওয়ায় মানুষের স্বস্তির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন আর কোনো কিছুই মানতে চাইছে না। এছাড়া কোভিড-১৯ এর টিকা আসার খবরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের শিথিলতা চলে এসেছে। আর এ কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা আসার খবরে এখনি উচ্ছ্বসিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ নাই। টিকার দুই ডোজ নেয়ার ১৪ দিন পর মানবদেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। তার আগ পর্যন্ত সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টিকার দুইটি ডোজ সম্পন্ন হয়ে গেলেও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হওয়া যাবে না। কারণ, অনুমোদিত টিকাগুলো বেশ কার্যকর হলেও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এগুলো শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শীতকালে নয় বরং গরমকালেই বেশি থাকে। তাদের আশঙ্কা, করোনাভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশিষ্ট্য যেহেতু এক রকম তাই এবারের গরমেও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে। ইউরোপের দেশগুলোয় শীতকালে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে হিটার ব্যবহারকে বড় কারণ মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে শীতকালে যে তাপমাত্রা পড়ে, সেখানে হিটার ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে গরমকালে এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও ছোট ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চালানোর প্রবণতা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে একই বাতাস সঞ্চালিত হওয়ায় বাংলাদেশে গরমকালেই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে মত তাদের।
এমন পরিস্থিতি সতর্কতার বিকল্প নেই। ভয়াবহ বিপদ এড়াতে টিকা নেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা জরুরি। গত এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগানোর এখনই সময়।