• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভালুকায় ড্রাগন চাষে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে প্রান্তিক কৃষি

হুমায়ুন আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:১৬, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২০:৫৯, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ভালুকায় ড্রাগন চাষে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে প্রান্তিক কৃষি

বদলেছে যুগ আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষ। মানুষের চলার এই গতি ধারায় দিন বদলের এই দিনে গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের পথ পরিক্রমা। পরিবর্তনশীল এই যুগে কৃষি খাতের নতুন-নতুন উদ্ভাবণ এবং আধুনিকায়নে কৃষকরা ঝুঁকছেন আধুনিক কৃষি বিপ্লবের দিকে।

অকৃষি জমিও এখন আসছে কৃষির আওতায়, স্বল্প শ্রম ও অল্প পুঁজিতে ফসলের আশাতিত ফলনে কৃষি খাতগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিকে করে তুলেছে সমৃদ্ধ। সমৃদ্ধশীল কৃষি উন্নয়নে ভালুকায় সবজি উৎপাদন এবং পোল্ট্রি ও মালটার সফলতার পর বিদেশি ফল ড্রাগন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদেও সফলতার দ্বার উন্মোচন করায়, প্রান্তিক চাষীদের ভাগ্য বদলের মধ্য দিয়ে অপার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির কৃষি খাত,অন্য অর্থ উর্পাজনশীল খাতগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে সক্ষমতাও অর্জন করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিজীবিরা।

শীত শেষ হয়ে গ্রীষ্মের শুরুতেই এই অঞ্চলে এবার বিপুল পরিমাণ ড্রাগন ফল উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকার কাচিনা ও উথুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে গেল দুই বছর আগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারি ড্রাগন ফল-১ দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার  জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত ড্রাগনের চাষাবাদ শুরু হয়। কৃষিতে অনুপযোগী পরিত্যক্ত উচু লাল দো-আশ মাটি এই ফল চাষে অধিক উপযোগী হওয়ায় আবাদের ৩ বছরের মাথায় বিনিয়োগ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে উদ্যেক্তরা।

কৃৃষিবিদদের মতে, পুষ্টিগুণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকায়,ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে,আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজম ও চর্বি কমায়,ড্রাগনের  বিদ্যমান প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা,ক্যালসিয়ামে হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত,ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ত্বক মসৃণ,ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।

আরও পড়ুন: 

 

ড্রাগনে এতসব ঔষধি গুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এর কদর ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে, লাভবান হয়ে উঠছে চাষি, গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাও হয়ে উঠছে সচল। 

উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিহাদী গ্রামের প্রান্তিক চাষী বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর (৪০)-এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ভাই মিলে তারা পরিত্যক্ত অকৃষি ২ একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন, মাটি,আবহাওয়া ড্রাগন চাষের অনুকুলে থাকায়  ফলন ভাল পেয়ে দুই বছরেই তাদের মূল বিনিয়োগ উঠিয়ে এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করছেন এই বছর ড্রাগন বিক্রি করে তাদের ৮ লাখ টাকা আয়  হবে। নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় এই ফলের ব্যাপক কদর থাকায় তারা নতুন করে আরও বেশী জমিতে ড্রাগনের আবাদ বাড়াবেন বলে জানান।

এছাড়াও ওই এলাকায় তাদেরকে অনুকরণ করে অনেকেই ড্রাগন চাষ করে লাভ হওয়ার কথা জানিয়ে বিল্লাল মাতাব্বর আরও জানান। পশ্চিম ভালুকায় এখনও অনেক অকৃষি অনাবাদী জমি রয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে অকৃষি জমিগুলো ড্রাগন চাষের আওতায় এনে কৃষকদের ড্রাগন চাষে উদ্ভুদ্ধ করলে,গ্রামীন অর্থনীতি হয়ে উঠবে শক্তিমালী। বেকার জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব দুর হয়ে  কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে গ্রামীণ জনপদে। 
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে,এই অর্থবছরে ভালুকায় ৬হেক্টর জমিতে পরিক্ষামূলক  ড্রাগন চাষ হয়,এতে ১২৫ মেট্রিকটন ফলন হয়। নতুন অর্থ বছরে ড্রাগন চাষ লক্ষ মাত্রার চেযেও বেশী হবে জানিয়েছেন কৃষিকর্মকর্তারা। 

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা,কৃষিবিদ জেসমিন জাহান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভালুকার মাটি ফল জাতীয় চাষাবাদের জন্যে অধিক উপযোগি থাকায়, এখানকার কৃষকরা নতুন-নতুন ফলের আবাদ করছে, মালটার সফলতার পর এবার তারা ড্রাগন চাষেও সফলতা বয়ে আনছে।এতে বিশাল জনগোষ্ঠির পুষ্টি ঘাটতি কমে আসছে,অর্থনীতিও হয়ে উঠছে শক্তিশালী,কৃষকরা যাতে ড্রাগন ফল আরও বেশী করে চাষ করতে পারে তার জন্যে নতুন-নতুন উদ্যেক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে,এর মধ্যদিয়েই ভালুকা ড্রাগন বিদেশেও রপ্তানী করে অর্থ আয় করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা ।

এছাড়াও দেশের মোট চাষভুক্ত জমির মধ্যে ফলের আওতায় রয়েছে মাত্র ২% জমি অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে মোট ফসলভিত্তিক আয়ের ১০% আসে ফল থেকেই। তাই বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য পুষ্টির চাহিদা পুরণসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ড্রাগনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আগামী ঋতুতে এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফ্রুটের উৎপাদন হবে এবং তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ফল ও ফলজাত দ্রব্যাদি রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ডিএই এর তথ্য মতে, বিদেশে ৫ দশমিক ৭৯৭ মে. টন ফল রফতানি করা হয়, যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

আরও পড়ুন: 

মন্তব্য করুন: