• NEWS PORTAL

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

‘বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা’

ফারুক মঈনউদ্দীন

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৪ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৩:০৬, ১৪ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
‘বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা’

ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

রবীন্দ্রনাথ জাপানে গিয়েছিলেন ১৯১৬ সালে, তিন বছর পর প্রকাশিত হয় তাঁর ভ্রমণকাহিনী ‘জাপান যাত্রী’। কিন্তু তাঁর জাপানযাত্রার চার বছর আগেই জাপান ভ্রমণ করে এসেছিলেন ঢাকার এক তরুণী বধূ হরিপ্রভা মল্লিক।

১৯০৭ সালে জাপানী যুবক উয়েমন তাকেদাকে বিয়ে করার সুবাদে হরিপ্রভা তাকেদা নামেই পরিচিত। তখনকার সমাজ বাস্তবতায় বিষয়টা ছিলো এক বিশাল ঘটনা। কেবল ভ্রমণ করাই নয়, তিনি ফিরে এসে একটা ভ্রমণকাহিনীও লিখে ফেলেছিলেন যা 'বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা' নামে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ-এর জাপান যাওয়ারও এক বছর আগে। সুতরাং জাপানের ওপর কোনো বাঙালির লেখা এটিই ছিলো প্রথম বই।
 
পরবর্তী সময়ে পাকাপাকিভাবে থাকার উদ্দেশ্যে হরিপ্রভা দ্বিতীয়বার শ্বশুর বাড়ি যান ১৯৪১ সালে। এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে উপার্জনহীন তাকেদা দম্পতি এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে হরিপ্রভা দেশে ফিরে আসেন, ততো দিনে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দেশে ফিরলেও দ্বিখণ্ডিত বঙ্গের ঢাকায় তাঁর থাকা হয়নি। স্বামীসহ তিনি শিলিগুড়ি চলে যান। বছরখানেকের মধ্যে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তবে হরিপ্রভা বেঁচে থাকতে পাকিস্তানও ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যায়। তিনি মারা যান ১৯৭২ সালে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। উল্লেখ্য এই হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশও।

এই হরিপ্রভা তাকেদা’র জীবন নিয়ে আধাঘণ্টার একটা ট্রাভেল ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন আরেক হেরিটেজ ট্রাভেলার এলিজা বিনতে এলাহী। অবশ্য হরিপ্রভা’র জাপানযাত্রার শতবার্ষিকীতে তানভীর মোকাম্মেলও একটা প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছিলেন। একজন হেরিটেজ ট্রাভেলার হিসেবে এলিজা বাংলাদেশের সবগুলো উপজেলায় ভ্রমণ করেছেন দেশের ঐতিহ্যের সন্ধানে। প্রায় একশ দশ বছর আগে এক বাঙালি তরুণী গৃহবধূ অজানা দেশ পাড়ি দিয়ে সেটাকে লিপিবব্ধ করে রাখার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছিলেন, এলিজা তারই ধারাবাহিকতা ধরে এগিয়ে এসেছেন তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে। এলিজার এই কাজটি শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায় প্রদর্শিত হবে আশা করি।

গত ৯ অক্টোবর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দর্শকপূর্ণ মিলনায়তনে এলিজা’র নিখুঁত কীর্তি প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনসহ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন আরেও অনেক গুণীজন উপস্থিত ছিলেন। স্বয়ং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও পুরো প্রদর্শনী দেখেন। জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ও লেখক মফিদুল হক ঢাকার মেট্রোরেলের একটা স্টেশন হরিপ্রভা তাকেদা’র স্মৃতিতে নামকরণ করার আহ্বান জানান। জাপানের রাষ্ট্রদূত তাঁর ভাষণে এই বিষয়ে চেষ্টা করবেন বলে কথাও দিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে আমার অনুবাদ করা হারুকি মুরাকামির ‘দৌড় বিষয়ে যত কথা’ বইটা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম।

লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া

মন্তব্য করুন: