বিভূতিভূষণের কিশোরী বধু
সংগৃহীত ছবি
প্রথম স্ত্রী গৌরীর অকালমৃত্যুতে অতি অল্প সময়ের বিভূতিভূষণের দাম্পত্যে যতি পড়ল। তার পর কুড়ি বছর পার। বিভূতিভূষণ তখন প্রৌঢ়। সেই সময়ই অন্তত তিরিশ বছরের ছোট, তাঁর সাহিত্য-অনুরাগী রমা চট্টোপাধ্যায় সোজাসুজি বিয়ের প্রস্তাব পাড়লেন বিভূতিভূষণের কাছে।
ঘটনাটি না শুনলে বোঝা যাবে না, বিয়ের আগে থেকেই রমা কতটা অনুরক্ত ছিলেন ওঁর প্রতি।
প্রস্তাব শুনে বিভূতিভূষণ গায়ের জামা খুলে বুকের কাঁচাপাকা রোম দেখিয়ে বললেন, “দ্যাখো, আমার অনেক বয়স হয়েছে, আর ক’দিনই বা বাঁচব?”
জবাবে সদ্য যুবতী রমা অবলীলায় বলেছিলেন, “আপনি যদি আর মাত্র একটা বছরও বাঁচেন, তাহলেও আমি আপনাকেই বিয়ে করব।”
রমার সঙ্গে বিভূতিভূষণের ১৯৪০, ৩ ডিসেম্বরে বিয়ে। ১৯৫০, ১ নভেম্বর বিভূতিভূষণের প্রয়াণ। দশ বছরের বিবাহিত জীবন তাদের।
মাত্র সাতাশ বছরের ভরা যৌবনে শিশুপুত্র নিয়ে বিধবা। কিন্তু নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অসমবয়সী প্রেমিক-স্বামীর ভালবাসায় বুঁদ হয়ে কাটিয়ে গেলেন রমাদেবী। অথচ তাঁর নিজেরও ছিল সাহিত্য-প্রতিভা। ছোট থেকেই লিখতেন। হাতে লেখা পত্রিকা বার করতেন।‘দেশ’ সাহিত্য পত্রিকার কোনও এক সংখ্যায় একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল রমা চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘স্বপ্ন’ এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্ন বাসুদেব’।
সারাটা জীবন স্বামীকে ‘আপনি’, অথচ আদর করে নিজের দেওয়া ‘মঙ্কু’ নাম ধরে ডাকতেন। আর বিভূতিভূষণ? ‘কল্যাণী, তুই’। সব জায়গায় স্বামীর কায়ার সঙ্গে ছায়া হয়ে থাকতেন। যুগলে প্রচুর বেড়াতেন দেশ জুড়ে, এবং অবশ্যই জঙ্গলে। স্বামীকে আরাধ্য দেবতা মানতেন। ছাপা হয়ে বেরোনোর আগে ধরে ধরে পড়তেন সাহিত্যিক স্বামীর সমস্ত লেখা। প্রয়োজনে পরামর্শ দিতেন, আলোচনা করতেন। এমনকী সেই মতো তাঁর লেখায় অদল-বদলও করতেন অত বড় সাহিত্যিক।
রমা কখনও নিজের সাহিত্য প্রতিভাকে ‘কেরিয়ার’ করেননি। আর তার জন্য আপসোস? তিলমাত্র না।
মন্তব্য করুন: