অর্থ ফেরতে আন্দোলনে নামার হুমকি
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ২৫ কোটি উন্নয়ন বরাদ্ধ কর্তনে ক্ষোভ
দেরীতে হলেও হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়া হলেও অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছে তারা। উন্নয়ন প্রকল্প পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত পার্বত্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি। নেই আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কোন বরাদ্ধ। পক্ষান্তরে পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকুলে বরাদ্ধের প্রায় ২৫ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্ধ কর্তন করে উন্নয়ন বোর্ডে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
বরাদ্ধের অর্থ কর্তনে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে বলে মনে করে খোদ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এ নিয়ে ক্ষোভ ধানা বাধছে মানুষের মাঝে। অর্থ ফেরত আনতে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন মাস পর আগের পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে গত ৭ জিরুনা ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়।কিš‘ নতুন পরিষদ গঠনের এক মাস পার হলেও অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় পরিষদ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। তবে পরিষদে এখনো বহাল রয়েছে পরিষদে হাসিনার আসলে বদলী করা দূর্নীতিবাজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা।
জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগি সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অনুকুলে ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। অপর দিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তার মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকুলে বরাদ্ধ ছিল ৬১.৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং পার্বত্য চট্টগ্রাম সহায়তা(কোড নং-২২১০০০৯০০) প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড-কে ১৬৫ কোটি টাকার স্থলে ২৩০ কোটি টাকা এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ১৬২ কোটি টাকার স্থলে ৯৭ কোটি সংশোধিত বরাদ্ধ বিভাজন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ২৪.৭০ কোটি টাকা কর্তন করে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্দ খাগড়াছড়িবাসী।
নাম প্রকাশ না শর্তে জনৈক উন্নয়ন কর্মীর মতে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জনসংখ্যা বেশি। তাছাড়া বিগত আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলা হতে ছিলেন। এ দীর্ঘ সময়ে খাগড়াছড়ি জেলায় উন্নয়ন বরাদ্ধ হলেও ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়মের কারণে জনকল্যাণে ব্যয় হয়নি।ছাত্র-জনতা বিপ্লবে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তারই অন্যতম সুবিধাভোগী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা এখনো আরো ক্ষমতাবান পদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি শেখ হাসিনার শাসনামলে এর আগে তিনি বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে তিনি জনরোষের ভয়ে বেশ কয়েকদিন আত্মগোপনে ছিলেন। যার কারণে ছাত্র-জনতার রক্তের ফসল অন্তর্বতিকালীন প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে অন্যান্য উপদেষ্টারা শপথ নিলেও সুপ্রদীপ চাকমা ছিলেন অনুপস্থিত। পরে তিনি আত্মপোগন থেকে এসে শপথ নেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের দাবী পলাতক শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগি সুপ্রদীপ চাকমাকে অন্তর্বতিকালীর সরকারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি আদৌ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা অথবা সরকার হতে উক্ত পদ হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিনা; সে তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনৈক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্তওণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হলেও এখনো প্রকল্প চুড়ান্ত হয়নি। অথচ অর্থ বছরের ৬ মাস প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্প চুড়ান্ত হবে, টেন্ডার আহবান হবে এ নিয়ে দুঃচিন্তায় কর্মকর্তারা। এছাড়া অন্যান্য খাতে কোন বরাদ্ধ এখনো দেওয়া হয়নি। অথচ পরিষদে অনুকুলে বরাদ্ধের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পরিষদের বরাদ্ধের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তরের ঘটনায় জেলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে। এতে করে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে বলে মনে করে খোদ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি মো: রাকিবুল হাসান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্ধে প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্তণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগি। কাজে বর্তমান সরকার সফল হোক সে কখনো চাইবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খাগগাছড়ি প্রতিনিধি মো. রফিক হোসেন অবিলম্বে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন টাস্কফোর্সে,জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ও বদলী হয়ে আসা কর্মকর্তাদের অপসারণ ও অন্যত্র বদলির দাবি জানিয়ে বলেন, তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পরিষদের বরাদ্ধের প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তরের ঘটনায় জেলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন এতে করে জেলায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রভাব পড়বে।
অপর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে আবার কর্তন করে নেওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যদি সৎ মানসিকতা না থাকে। তার মতে,নতুন বাংলাদেশ বিনিমমার্ণে সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন ও প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার জরুরি।
মন্তব্য করুন: