• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছুটে গেলেন রিজিয়ন কমান্ডার দিলেন নগদ অর্থ ও ঘর বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২০:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ছুটে গেলেন রিজিয়ন কমান্ডার দিলেন নগদ অর্থ ও ঘর বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি

দুর্বিষহ জীবনের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়ার বেলতলী গ্রামের বাসিন্দা ৭৩ বছর বয়সী বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও তার ৭০ বছর বয়সী প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পতি। বাঁশ ও পলিথিনের তৈরি ছোট একটি ঝুপড়িঘরে তাদের এখন মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন। কখনো কখনো চুলায় জ্বলে না আগুন। ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে শীত ঢুকছে। সামনে বর্ষা নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে। 

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটিার দুরে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ পেরাছড়ার কেলতলী গ্রাম। গাড়ী,বাঁশে সাঁকো ও দেড় কি. মি. পায়ে হেটে গেলে পাহাড়ের পাদদেশে জড়াজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও তার ৭০ বছর বয়সী প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পতির বসবাস। এক সময় তাদের ছিল চার একর ধানের জমি ও একশ শতক জমিতে বসতবাড়ী। ছিল গোলাভরা ধান,গোয়ালভরা গরু। আর এখন ২০ শতক দখলশর্ত অন্যের জায়গা জরাজীর্ণ  ঘরে বসবাস। কোন রকম বাঁশ,গাছ পলিথিন মুড়ানো ঝুপড়ি ঘরটি একটু বাতাস আসলে উড়ে যাবে। 

বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পতির দুই ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে রেখে চলে গেছেন। এখন আর তাদের খোঁজখবর রাখেন না। বার্ধক্যের এই সময়ে তারা সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বিগত সরকারের আমলে খাগড়াছড়িতে  আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার গৃহহীন পরিবারের নামে ঘর বরাদ্ধ হলেও বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পতির ভাগ্যে জুটেনি। 

প্রভাতী বালা ত্রিপুরা বলেন,ঘরটি বাতাস আসলে শব্দ করে। প্রতিটা মুহূর্তে ঘর ভেঙ্গে মরে যাওয়ার ভয় হয়। মাঝেমধ্যে আমার বুড়া রশি দিয়ে ঘরে চাল ঠিক করতে গেলে ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হয়। আমরা খুবই ভয়ে ভয়ে থাকি।

অপর দিতে তার স্বামী বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, এখন শীতে কাপছি। বর্ষার সময় ঘরে উপর থেকে পানি পড়ে ও নিচ থেকেও পানি ঢুকে। নিজের জায়গা নাই,থাকি অন্যের জায়গায়।

যুগেশ্বর ত্রিপুরার অভিযোগ, টানা সাড়ে ১৫ বছর খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এমপি ও মন্ত্রী ছিল। অথচ আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। যারা ৫০ হাজার টাকা করে দিতে পেরেছে তারা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছে। শুধু বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা নয়,খাগড়াছড়িতে এ ধরনের হাজার হাজার ত্রিপুরা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের কোন সহযোগিতা পায়নি। এটার আমাদের দুর্ভাগ্য।

অভিযোগ রয়েছে, দলীয় বিবেচনায় ও টাকার বিনিময়ে বিগত সময়ে পেরাছড়ার বেলতলী গ্রামের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অনেকে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। দলীয় বিচেনা ও টাকার বিনিময়ে ঘর দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, মালামাল আনা-নেওয়ার সমস্যার অনেক পরিবারকে ঘর দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আশ-পাশে অনেকে ঘর পেলেও প্রকৃত গৃহহীন বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পত্তি কেন পেলো না এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান এই জনপ্রতিনিধি।

এদিকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পত্তির দুর্বিষহ জীবনের খবর শোনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো: আমান হাসান। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে নগদ দশ হাজার টাকা দেন এবং দ্রুত একটি ঘর নির্মাণ করে প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আওতায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ না খেয়ে থাকবে না। এ ধরনের যখনী তথ্য পাবো তাদের পাশে দাঁড়াবো। 

খাগড়াছড়ি জেলা কারবারি সমিতির সভাপতি সভাপতি রণিক ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডারের এমন মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকে ঘর পেয়েছে। কিন্তু প্রকৃত গৃহহীন বরেন্দ্র  লাল ত্রিপুরা ও প্রভাতী বালা ত্রিপুরা দম্পতি ঘর না পাওয়াকে দুঃখ জনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

যে সেনাবাহিনীকে নিয়ে পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত বিষাদগার করছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে সেখানে সেই সেনাবাহিনী আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2