পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে জরুরি জিও ব্যাগ ফেলার দাবি গ্রামবাসীর

মানিকগঞ্জে পদ্মা নদী ভাঙন থেকে ঘরবাড়ি বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও (জিওটেক্সটাইল) ব্যাগ ফেলার দাবিতে গণসমাবেশ করেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। শনিবার (১৯ জুলাই) বিকালে জেলার হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচী গ্রামের দুই শতাধিক ভুক্তভোগী পরিবার এই গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, মালুচী গ্রামের ২নং ওয়ার্ডে দুই শতাধিক পরিবারে বাস করে। চলমান নদী ভাঙনে পাড় ভাঙতে-ভাঙতে ৩০ মিটার বসতির ভিতরে ঢুকে পড়েছে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা না হলে বাকি পরিবারগুলোও ভাঙনের শিকার হবে।
গণসমাবেশে লাঠি ভর দিয়ে এসেছেন শতবর্ষ ছুঁইছুঁই নারী নেছা বেগম (৯০)। স্বামী মৃত ইসাক আলী প্রামানিক। একমাত্র মেয়ে আগেই মারা গেছে। এখন তিনি দিন পার করেন মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি লালচানের (৩৫) সাথে। লালচান কৃষিকাজ করেন। তাদের ১১ শতাংশ ভিটেবাড়ি, যার মাত্র ১০ মিটার দূরেই বয়ে চলেছে খরস্রোতা পদ্মা। ভয়াল থাবায় যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে যাবে শেষ অবলম্বন বাড়িটুকুও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে আছি, স্বামীর মাটিতে জানি থাইকা যাইতে পারি।’
স্বামী-সন্তানহারা হাফিজা বেগম (৬০) বলেন, এই পদ্মায় তিনবার বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে আমার। অন্যের জমির ওপরে পুরান টিন আর ছনের বেড়া দিয়ে ঘর করে থাকতেছি। আর হাত পনের ভাঙলেই আমার ঘরে আইসা ঠেকবো। এইটুকু যদি ভেঙে যায় নতুন ঘর করার আর সামর্থ্য নাই আমার। রাতের বেলা যখন ঘরে একা থাকি নদীর গর্জনে দুই চোখ বাইয়া পানি পড়ে। স্বামী মরার পর দুই ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে আমায় ছেড়ে চলে গেছে। কেউ কোনো খোঁজ খবর নেয় না। কয়েকটা ছাগল পালি, এই দিয়েই চলি।
সমাবেশে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খোরশেদ আলম খান, সাধারণ সম্পাদক মো. আজহারউদ্দিন, ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ইদ্রিস আলী, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী আব্দুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
খোরশেদ আলম খান বলেন, এই অঞ্চলের মানুষগুলো খুবই নিরীহ। কৃষিকাজ আমাদের জীবিকার উৎস। আমরা দীর্ঘ বছর ধরেই ভাঙনের শিকার হচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়গুলো জানিয়েছি, তারা দেখে গেছে। তারা যদি দ্রুত সময়ের ভেতর জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলতো তাহলে ভাঙন থেকে আমরা বাঁচতে পারতাম।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, মালুচী এলাকাতে জরুরি কিছু কাজের জন্য আমরা দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ সেখানে করতে পারবো।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: