• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাবার ঘর নেই, কাজের বিনিময়ে ঠাঁই পান ৩ মেয়ে

মাওলা  সুজন, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৯ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৫:৪০, ৯ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
বাবার ঘর নেই, কাজের বিনিময়ে ঠাঁই পান ৩ মেয়ে

৬ মেয়ে ও ২ ছেলে। বড় মেয়েকে ঋণ নিয়ে কোনো মতে বিয়ে দিয়েছেন। এখন ৩টি মেয়ে বিবাহ উপযোগী। প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করার শর্তে তাদের থাকা ও খাওয়া হয়। বাকীদের নিয়ে জরাজীর্ণ ও ভাঙ্গা ঝুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মো. নাজিম উদ্দিন-ফেরদৌসীর দম্পতি।

জানা যায়, হাতিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের গুল্যাখালী ছৈয়দিয়া বাজারের পশ্চিমে ভাঙা বেড়া এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্র একটি ঘরে মানবেতর বসবাস নাজিম-ফেরদৌসী দম্পতির। অভাবের পাশাপাশি ঝড় বৃষ্টি এবং শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘর। জরাজীর্ণ, ভাঙা, লক্কর-ঝক্কর ঝুপড়ি ঘরে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই দম্পত্তি।

নাজিম উদ্দীন ও ফেরদৌসী দম্পতি

স্থানীয়রা জানান, নাজিম উদ্দিন প্রথম দিকে ওছখালী পুরাতন বাজারে জিলাপি দোকানে কাজ করতেন, এরপর স্থানীয় বড় মিয়ার বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। এরপর ছৈয়দিয়া বাজার হাই স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। বর্তমানে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারছেন নাজিম উদ্দিন। 

৬ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে বড় মেয়েকে ঋণ করে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ৩ মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলেও ঘর ও অর্থের অভাবে মেয়েদের অন্যের বাড়িতে থাকা ও খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করতে দিয়েছেন। তার বড় ছেলে আবদুর রহমান স্থানীয় মাদরাসায় ৩য় শ্রেণীতে পড়েন।

এটাও মানুষের থাকার ঘর! ভাবা যায়?

মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি আগে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুখে আমার সেই ঝালমুড়ি বিক্রি বন্ধ। এখন খুব কষ্টে দিন যায়। বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায় না। ৩ মেয়ে বিবাহ উপযুক্ত কিন্তু ঘরের কারণে তাদের বিয়ে হচ্ছে না। ঘরে তাদের থাকার মতো জায়গা নাই। এখন আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই।

নাজিম উদ্দিন আরও বলেন,  আমার এই ঘরে থাকার মত অবস্থা নাই। এতগুলো সন্তান নিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীবদের জন্য ঘর তৈরী  করে দিচ্ছেন। যদি আমাকে একটা ঘর দেন তাহলে অনেক উপকার হতো।

নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, মেয়েরা বিয়ের উপযুক্ত হইসে কিন্তু এই ঘরে থাকার মত ব্যবস্থা নাই। কোনো বেতন নাই শুধু তাদের থাকতে দিবে, খাইতে দিবে এই শর্তে অন্যের বাড়িতে থাকে তারা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলো নিয়ে বড় বিপদে আছি।

ভাঙা-চোরা আর জোড়াতালি চলছে জীবন

নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. আবদুর রহমান বলেন, আমি মাদরাসায় ৩য় শ্রেণীতে পড়ি। কাউকে বলতে পারি না আমাদের ঘর নাই। আমি ছোট তো কাজ করতে পারি না। নিজেদের বাড়ির পরিচয় দিতে পারি না।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী মঞ্জু রহমান বলেন, আমরা ছোটবেলায় নাজিম মামার ভ্যানগাড়ি থেকে জিলাপি ও ঝালমুড়ি খেতাম। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা আলীর কাছে এই পরিবারের জন্য একটি মুজিববর্ষের ঘরের দাবি করছি৷ যাতে তারা সরকারি ঘরে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।

হাতিয়া পৌরসভার মেয়র কে এম ওবায়েদ উল্যাহ বলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে নাজিম উদ্দিনকে চিনি। বর্তমানে সে কাজ করতে পারে না। তবে সে কখনো আমার কাছে আসে নাই ঘরের জন্য। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি। আগামী দিনের বরাদ্দ দিয়ে তার জন্য ঘর প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: