আলোচিত রাজিন হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাং এর ১৭ সদস্যের কারাদণ্ড
খুলনার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন (১৩) হত্যা মামলায় কিশোর গ্যাং এর ১৭ সদস্যের ১৭ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে আদালতের বিচারক আব্দুস সালাম খান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ১৭ আসামির সকলেই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদ আহমেদ।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সাব্বির হাওলাদার (১৬), বিএম মাজিব হাসান রয়েল(১২), শাহারিয়ার জামান তুর্য্য (১৭), রিয়ান শেখ ওরফে রেফাত (১২), ফাহিম ইসলাম মনি (১৪), সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩), জিসান খান (১৫), তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), শাকিব খান শিমুল (১৭), অন্তর কুসার দাস(১৫), মোঃ হাকিম(১৭), সৈকত (১৬), শেখ সাকিব (১৭), আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৫), শেখ তামিম (১৬), সাকরান সালেহ ওরফে মিতুল (১২) ও মোস্তফিজুর রহমান নাঈম (১৪)।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি খুলনা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৩১তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আনন্দঘন অনুষ্ঠান রাত নয়টার দিকে এক দুঃসংবাদে বিষাদে রূপ নেয়। রাতে দুর্বৃত্তের ছুরির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হয় পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন (১৩)। এ হত্যকান্ডটি খুলনার একটি আলোচিত ঘটনা। (১৭ মে) এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্কুলের একজন ছাত্রীকে বয়রা এলাকার কিছু বখাটে ছেলে প্রায় উত্ত্যক্ত করত। ঘটনাটি জানতে পেরে রাজিন প্রতিবাদ করে। এ কারণে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বখাটেরা পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি রাতে রাজিনকে ছুরি মেরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার একদিন পরে নিহতের পিতা ৬ জন আসামির নাম উল্লেখসহ আজ্ঞাত আরও ১০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাতে পুলিশ ওই এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে। তাদের ৫জন আদালতে হত্যাকান্ডের বিবরণ জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তামিমের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রূপসা উপজেলার আইচগাতি থেকে গ্রেপ্তার করা মো: মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বির হাওলাদারকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকন্ডে ব্যবহৃত ছুরি।
চার্জশিটে বর্ণিত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে রাজিন পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। মুজগুন্নী এলাকার মো: ফারুখ হোসেনের ছেলে মো: ফাহিম ইসলামের সাথে ইভটিজিং এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছিল রাজিনের। ৩১তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সবার জন্য পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই রাতে ফাহিম তার বন্ধুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যায় এবং রাজিনকে হত্যা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই মো: মিজানুর রহমান একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে এর মধ্যে নাজিম উল্লাহ ওরফে ফয়সাল প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার বিচার চলছে।
যে কারণে হত্যা করা হয় রাজিনকে:
চার্জশিট থেকে জানা গেছে, রাজিনের এক সহপাঠিনীকে প্রায় উত্তাক্ত করত মুজগুন্নী এলাকার বখাটে ছেলে মো: ফাহিম ইসলাম। এর প্রতিবাদ করায় রাজিনের উপর ক্ষুব্ধ হয় ফাহিম। তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে সে। একপর্যায়ে ফাহিম তার বন্ধু বিএম মাজিব হাসান রয়েলের সাথে যোগাযোগ করে। রয়েল আবার মো: মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বিরকে জানায়। অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে একবার তার ওপর চড়াও হয় তারা।
পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের হস্তক্ষেপে মিমাংসা হয়। রাতে অনুষ্ঠানে বসাকে কেন্দ্র করে রাজিনের সাথে আসামি তামিমের হাতাহাতি হয়। পরে তাকে মঞ্চের পিছনে নিয়ে গিয়ে উল্লিখিত আসামিরা চড় থাপ্পর মারতে থাকে। একপর্যায়ে রয়েল, তুর্য্য, রেফাত ও ফাহিম হাত ধরা মাত্র মো: মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সাব্বির হাওলাদার কোমর থেকে ছুরি বের করে রাজিনের পেটে ঢুকিয়ে দিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে রাজিনকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিহত রাজিনের মা রেহেনা বেগম রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বয়রা এলাকার ডেঞ্জার বয়েজ, গোল্ডেন বয়েজ ও চিপসী বয়েজ নামে কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এ গ্যাং এ ২৫ জন করে সদস্য রয়েছে। এ সকল গ্রুপের সদস্যর হাতে নিহত হয়েছে তার সন্তান। তিনি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চান। যেন আমার মতো আর কোন মায়ের কোল খালি না হয়।
বিভি/এপি/জেড
মন্তব্য করুন: