• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের কাছে যাবে না লায়লা, জোরাজুরি করলে ঘটাবে বিপদ

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ২১:৫৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মায়ের কাছে যাবে না লায়লা, জোরাজুরি করলে ঘটাবে বিপদ

জাপানি-বাংলাদেশী দম্পতির মেজো মেয়ে নাকানো লায়লা লিনা শরীফ (১১) কোনোভাবেই মায়ের কাছে যেতে চাইছে না। আদালতের রায়ের পরও মা ও বড় বোনের জোরাজুরিও মায়ের কাছে ফেরাতে পারেনি তাকে। উল্টো, মায়ের কাছে জোর করে পাঠালে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিবে বলে হুমকি দিয়েছে লায়লা। এমতাবস্থায় কি করবে তা জানতে আদালতের কাছে আবেদন করেছে গুলশান থানা পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মেজো মেয়েকে মায়ের জিম্মায় পেতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেন শিশুটির মা নাকানো এরিকো। একই সময় বাবার জিম্মায় মেয়েকে রাখতে আবেদন করেন শিশুর বাবা ইমরান শরীফ। ওইদিন বিচারক মামুনুর রশিদের আদালত উভয় পক্ষের আবেদন পর্যালোচনা করে রায় দেন, মেজো মেয়ে লায়লা একদিন বাবার কাছে একদিন মায়ের কাছে থাকবে।

এই শুনানীর আগে বিচারক দুই সন্তান জেসমিন ও লায়লার সঙ্গে কথা বলেন। এসময় লায়লা বিচারকের খাস কামরায় জানায়, সে বাবার কাছে থাকতে চায়। আদেশের আগে বিচারক বলেন, লিনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে বাবার কাছে থাকতে চায়। না হয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যেতে চায়। সে মায়ের সঙ্গে জাপানে যেতে চায় না। তবে বলেনি মায়ের কাছে থাকবে না। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একদিন বাবা ও একদিন মায়ের কাছে থাকার আদেশ দেন। 

গত ১৯ জানুয়ারি, সন্তানদের মায়ের জিম্মায় দেওয়ার বিষয়ে আদালতের রায়ের পর বাবা আপিল করেছেন সন্তানদের নিজের জিম্মায় পেতে। এই আপিল আদেশের জন্য আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। তাই এদিন পর্যন্ত মেজো মেয়েকে বাবা ও মায়ের কাছে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গুলশান থানা থেকে আদালতে করা আবেদনের সূত্রে জানা যায়, ২ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ের পর ৩ ফেব্রুয়ারি মেজো মেয়েকে তার মায়ের কাছে দিতে সকাল ১১টার আগেই থানায় এসে হাজির হন ইমরান শরীফ। এরপর সকাল ১১টায় বড় মেয়ে জেসমিন মালেকাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন জাপানিজ মা এরিকো নাকানো। এসময় লায়লা লিনাকে বাসায় নিতে চাইলে সে যেতে চায়নি। পরে সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মা ও বড় মেয়ে অনেক বুঝিয়েও লায়লাকে রাজি করাতে পারেনি। সে তার বাবার কাছেই থাকতে চায়। কোনোভাবেই মায়ের সঙ্গে যেতে রাজী হয়নি। এক পর্যায়ে তার মা ও বড় বোন জোরাজুরি করলে লায়লা জানায়, সে মায়ের কাছে যাবে না। যদি তাকে জোর করে মায়ের কাছে পাঠায় তবে সে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে। পরে পুলিশ লায়লাকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে থানায় হাজির হবে শর্তে ইমরান শরীফের জিম্মায় দেওয়া হয় লায়লাকে। এমতাবস্থায় লায়লাকে নিয়ে করণিয় কি হবে জানতে চেয়ে আদালতের নির্দেশনা জানতে চেয়েছে গুলশান থানা পুলিশ।

এবিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিএম ফরমান আলী বলেন, আদালতের নির্দেশের পরও মেজো মেয়ে লায়লা তার মায়ের কাছে যেতে চায় না। বিষয়টি আমরা আদালতকে অবহিত করেছি। 

এ বিষয়ে ইমরান শরীফ বাংলাভিশনকে বলেন, প্রথম দিন আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি ইচ্ছা না থাকা সত্বেও মেয়েকে সুন্দরভাবে থানায় এসে তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু সকাল ১১টার দিকে তার মায়ের কাছে মেয়েকে বুঝিয়ে দিলেও ঘন্টাখানেক পরও তারা থানা থেকে বের হচ্ছে না। আমি মেয়েকে দিয়েই থানার বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম, আমিতো বাবা। আমার কেন জানি মনে সন্দেহ হলো। তাই আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দুপুর ১টার দিকে আবারও থানায় ঢুকি এবং গিয়ে দেখি আমার মেয়েকে এরিকো ও বড় মেয়ে জেসমিন টানাহেঁচড়া করছে। এই ভয়ে আমার মেজো মেয়ে লায়লা থানার একটা টেবিলে ভেতরে ঢুকে যায়। তখন আমি আমার মেয়েকে টেনে তুলে পুলিশকে বলেছি, আমার মেয়ের এই দশা কেন? আমিতো স্বাভাবিকভাবে মেয়েকে আপনাদের জিম্মায় দিয়ে গেছি। আমি মেয়েকে দিবো না। প্রয়োজনে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলেন। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ মুছলেখা নিয়ে মেয়েকে আমার জিম্মায় দেয়। কিন্তু এই অবস্থায় পুলিশ আদালতে ঘটনা উল্লেখ করে পরবর্তী নির্দেশনা পেতে আবেদন করেছেন বলে শুনেছি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে এখনও কোনো নির্দেশনা না আসায় একদিন পর পর মেয়েকে নিয়ে থানায় হাজির হচ্ছি। কিন্তু প্রথমদিনের মতো, দ্বিতীয় দিন এবং তৃতীয় দিনও তার মেয়েকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। মেয়ে কোনোভাবেই যায়নি। এভাবে আর মেয়েকে নিয়ে থানায় আসতে ইচ্ছে করে না। মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু কি করবো, আদালতের নির্দেশ মেনে আমি চলছি। তাই মেয়েকে পরবর্তী নিদের্শ না আসা পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে আগামী পরশু আবারও আসবো থানায়। 

তবে মায়ের সঙ্গে মেয়ে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এরিকো নাকানো বাংলাভিশনকে বলেন, ইমরান শরীফ মেয়েকে মায়ের বিষয়ে নেতিবাচক বুঝিয়ে ব্রেনওয়াশ করেছে। তাই সে আসতে চায় না। তবে এই অভিযোগ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইমরান শরীফ। উল্টো তিনি বলছেন, তিনিই ব্রেনওয়াশ করে বড় মেয়েকে চাইল্ড সোলজার বানিয়ে বাবার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।

বিভি/এসএইচ/এজেড

মন্তব্য করুন: