• NEWS PORTAL

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

পানির ট্যাংক বিতরণে অনিয়ম, অভিযোগের তীর এমপি’র দিকে

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৪ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১১:২০, ১৬ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ

বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের সবশেষ উপজেলা মঠবাড়িয়া। সমুদ্রঘেঁষা হওয়ায় এই উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত। তাই বসানো যায় না গভীর নলকূপও। বর্ষাকালে পানিতে খুব একটা সমস্যা না হলেও শুকনো মৌসুমে মানুষকে মারাত্মক কষ্ট পোহাতে হয়। দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সারতে তখন একমাত্র অবলম্বন পুকুর এবং ধরে রাখা বৃষ্টির পানি।

জাতীয় সংসদে ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে অগ্নিঝরা বক্তব্য দিলেও সেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সাংসদ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী’র ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে সরকার গেলো অর্থবছরে ৪৭ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে মঠবাড়িয়ায় নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে প্রকল্প হাতে নেয়। যেখানে তিন হাজার লিটার বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতার সাত হাজার ৪০০ পানির ট্যাংক ছাড়াও ৩৩টি কমিউনিটি, পাঁচটি পাবলিক টয়লেট, ১০০টি ডিপ টিউবওয়েল, কয়েকটি প্ল্যান্ট এবং পুকুর পুনঃখনন করার কথা। প্রকল্পের প্রতিটি পানির ট্যাংকির জন্য সুবিধাভোগীদের সরকার নির্ধারিত দেড় হাজার টাকা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অভিযোগ আছে, উল্টো তাঁদেরই গুণতে হচ্ছে পাঁচ-সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। বেআইনিভাবে যা স্থানীয় সাংসদের লোকজন নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুধু গরিবদের ঘরপ্রতি একটি করে ট্যাংক বরাদ্দের কথা থাকলেও খোদ সাংসদের শ্বশুর বাড়িতে তিন-চারটি দেওয়া হয়েছে বলে সরেজমিনে দেখা যায়। ট্যাংক না পেয়ে লবণাক্ত পানি ব্যবহার  করে অনেকেই পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বলেও জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় সাংসদের দুর্নীতিবাজ সহযোগীদের কারণে সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের অভিযোগ, এমপি’র লোকজন গরিব মানুষের ট্যাংক তাঁদের না দিয়ে পাশের উপজেলায় বিক্রি করেছে।

হলতা গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম ঝনো বলেন, সুপেয় পানির অভাবে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। বেশি সমস্যা হয় শিশুদের। এই সমস্যা সমাধানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ট্যাংক দিয়েছেন। বিতরণে অনিয়মের কারণে এই প্রকল্পের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এলাকার মানুষ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়ে কেন দিতে পারছি না। আমি তখন তাদের বলে দেই এটি এমপি নিজেই তত্ত্বাবধান করেন।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান সিফাত জানান, এমপি’র পিএস হাসান, রঞ্জু, শহিদ- এরাই মঠবাড়িয়ার মানুষের থেকে তিন হাজার, চার হাজার, পাঁচ হাজার এবং সাত হাজার টাকা নিয়ে ট্যাংক বিতরণ করেন।

অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন মঠবাড়ীয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দীন আহম্মেদও। তিনি বলেন, নিজস্ব লোকদের দিয়ে বাণিজ্য করে বন্টন করেন। কিছু ট্যাংক পাশের উপজেলা পাথরঘাটার চরদুয়ানীতে বিক্রি করেছেন। পরে সাতটি ট্যাংক উদ্ধার করেন। আমরা এগুলো উপজেলার মাসিক সভায় উত্থাপন করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।  

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর বলেন, জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর গুনকীর্তন করেন কিন্তু এলাকায় এসে আওয়ামী লীগ নিধন করেন। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দিয়ে উন্নয়ন কমিটি করেন। তাদের থেকে লিস্ট নিয়ে যেখানে তাঁর লোক আছে সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ করেন। অথচ উপজেলা-ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন করছেন না।  

বরগুনা জেলার পাথরঘাটায় বিক্রি করা পানির ট্যাংক ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে স্বীকার করেন সাংসদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আলী রেজা রঞ্জু। একজনের শশুরবাড়ি পাথরঘাটার চরদুয়ানীতে। সেখানে তারা নিতে চেয়েছিলেন। পরে এমপি নাম কেটে ট্যাংক রেখে দিয়েছেন। 

ট্যাংক বিতরণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা শুনেছে বলে জানান মঠবাড়িয়া জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী আব্দুস সত্তার খান লিটন। তিনি বলেন, এসব অনিয়ম কারা করেছে তার জানা নেই। এখন অনিয়ম ঠেকাতে তিনি চেষ্টা করছেন। 

জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আলীম গাজী বলেন, এই বিষয়ে তিনি এবং তাঁর উর্ধতন কর্মকর্তা এমপি’র সংগে বৈঠকে কথা বলেছেন। এমপি তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। 

সরকারি ট্যাংক বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে সাংসদ ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীকে এক সপ্তাহে একাধিকবার ফোন এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

 

বিভি/এনএম/এএন

মন্তব্য করুন: