• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি, না পেলে ডাকাতি

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ২৪ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৫:১৭, ২৪ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি, না পেলে ডাকাতি

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নির্মানাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা চাইতো একটি চক্র। চাঁদা না দিলে প্রতিশোধ নিতে করতো ডাকাতি। প্রতিবাদ করলে প্রাণে মারার হুমকিও দিতো।

সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামলীতে এমনি একটি ঘটনার প্রতিবাদ করায় চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত হন একটি মোটর সাইকেল শো রুমের দুই কর্মকর্তা। ঘটনা র‍্যাবের নজরে আসলে চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। 

রবিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরের শ্যামলীবাগ এলাকায় অবস্থিত উত্তরা মটরস এর ডিলার ‘ইডেন আটো’স’ নামের শো-রুমে একটি ডাকাত দল প্রবেশ করে ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মোটর টেকনিশিয়ান নুরনবী হাসানকে ধারালো চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এসময় ডাকাত দলের কিছু সদস্য শো-রুমের দোতলায় উঠে গ্লাস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ক্যাশ ড্রয়ার ইত্যাদি ভাংচুর করে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ অফিসের ডেস্কটপ মনিটর নিয়ে চলে যায়। ওই ঘটনায় শো-রুমের মালিকের পক্ষ থেকে কে এম আবদুল খালেক, শেরেবাংলা নগর থানায় ঘটনার পরদিন একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৩।

তিনি আরও বলেন, ডাকাতির ঘটনাটি ঢাকার অন্যতম প্রধান সড়ক ও জনবহুল এলাকায় সংগঠিত হওয়ায় স্থানীয় জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করে এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। 

কমান্ডার মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতর গোয়ন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এবং ধামরাই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত চক্রের মূলহোতা মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির (৩৩), জসিম উদ্দিন (৩৪), জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), খায়রুল ভূঁইয়া (২০), মো. রাকিব হাসান (২০) ও (৬) মো. নয়ন (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি, শো-রুম থেকে লুন্ঠিত এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার এবং ডাকাতিকালে তাদের পরিহিত দু’টি গেঞ্জি এবং একটি লুঙ্গি জব্দ করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে। 

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য, যার সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা সকলেই এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে এবং এই সূত্রে পরস্পরের পরিচিত। এই চক্রটি ঢাকার মোহাম্মদপুর, বসিলা, শ্যামলী এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ভাঙিয়ে কয়েক বছর ধরে এলাকার ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। দাবীকৃত চাঁদা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। তারপরেও কেউ চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তারা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলা ও ডাকাতি করে থাকে। গ্রেফতারকৃতদের নামে একাধিক চুরি, ডাকাতি এবং চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এছাড়াও তারা এলাকায় মাদক ও চোরাই অটোরিকশার ব্যাবসা, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। 

তিনি বলেন, তারা বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক তথাকথিত সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটো’স নামের প্রতিষ্ঠানটিতে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে বিভিন্ন রকম হুমকি প্রদান করে। হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে এই চক্রের সদস্যরা। ১১ অক্টোবর তারা ঢাকা উদ্যান এলাকায় গ্রেফতারকৃত জসিম-এর আবাসস্থলে জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল এবং রাকিব একত্রিত হয়ে শ্যামলী ইডেন অটো শো-রুম ডাকাতি করার বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। অতঃপর ওই দিন সন্ধ্যায় ওই শো-রুম রেকি করে। গ্রেফতারকৃত জসিম এবং জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি কেনে। পরের দিন ১২ অক্টোবর পুনরায় ঢাকা উদ্যানে জড়ো হয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শো-রুমের সামনে আসে এবং শো-রুমের লোকজন ও আশেপাশের লোকজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। অতঃপর গ্রেফতারকৃত জাহিদ তার কাছে রক্ষিত ব্যাগ থেকে ৩টি চাপাতি জহির, রাকিব এবং খায়রুল এর হাতে দেয় এবং নিজে ১টি চাপাতি নিয়ে নয়নসহ একযোগে শো-রুমে প্রবেশ করে। এসময় গ্রেফতারকৃত জসিম শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করে। 

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত জহির শো-রুমে প্রবেশ করেই ত্রাস সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে ম্যানেজার সবুজকে আঘাত করে এবং রাকিব চাপাতি দিয়ে শো-রুমের মোটর টেকনিশিয়ান হাসানকে আঘাত করে। এসময় দলের অন্য সদস্যরা শো-রুমে ভাঙচুর করে। গ্রেফতারকৃত জাহিদ চাপাতি নিয়ে শো-রুমের ২য় তলায় গিয়ে কাচের দরজা ভেঙে ক্যাশিয়ারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ অর্থ লুট করে। গ্রেফতারকৃত খায়রুল শো-রুম থেকে ১টি পুরানো ডেস্কটপের মনিটর নিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃতরা ৫-৬ মিনিটেই ডাকাতি সম্পন্ন করে বের হয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায় যে, শো-রুম থেকে বের হয়ে জহির এবং জাহিদ লেকসিটিতে জাহিদের বাসায় টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্ব স্ব ভাগের টাকা নিয়ে সবাই আত্মগোপনে চলে যায়। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির চক্রের মূলহোতা। জিজ্ঞাসাবাদে জহির আরও জানায়, সে জসিম ও অন্যান্যদের সহযোগিতা নিয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নির্মাণধীন বিল্ডিং থেকে টাকা দাবিসহ নানাবিদ অবৈধ কাজের সংগে জড়িত। মোটরসাইকেল শো-রুমে ডাকাতির সময় তার নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীসহ ডাকাতি সম্পন্ন করে। শো-রুমে প্রবেশের সংগে সংগেই সে ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীবকে চাপাতি দিয়ে বাম পায়ে আঘাত করে। সে পূর্বে অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে চোরাই অটোরিকশার ব্যবসার সংগে জড়িত বলে জানায়। তার নামে একটি ডাকাতি মামলা এবং মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত জসিম এই চক্রের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। মোটরসাইকেল শো-রুমে ডাকাতির প্রাক্কালে সকলকে একত্র করা এবং ডাকাতি চলাকালীন শো-রুমের বাইরে অবস্থান করে। সে ওয়াচম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিলো। সে ঢাকা উদ্যানে অবস্থিত একটি হাউজিংয়ে পিয়নের চাকরির অন্তরালে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধের সংগে যুক্ত। তার বিরুদ্ধেও মোহাম্মদপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি এবং জমি দখল এর মামলা রয়েছে।

বিভি/এসএইচ/এসডি

মন্তব্য করুন: