• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবাকে অন্য নারীর সংগে দেখে ফেলাই কাল হলো ফাতিমা’র

প্রকাশিত: ১৫:০১, ১৭ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৫:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
বাবাকে অন্য নারীর সংগে দেখে ফেলাই কাল হলো ফাতিমা’র

বছরখানেক ধরে প্রতিবেশী লাইলি আক্তার-এর (৩০) সংগে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লার দেবিদ্বারের ট্রাক্টরচালক আমির হোসেন (২৫)। একদিন আমিরকে লাইলির সংগে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে আমির-এর পাঁচ বছরের শিশুকন্যা ফাহিমা।

সেই ঘটনাই কাল হলো শিশু ফাহিমা’র। ঘটনা চাপা দিতে লাইলি’র প্ররোচনায় ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাবার পরিকল্পনায় নিজের মেয়ে ফাহিমা হত্যার নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আরও পড়ুন:
ফেসবুক-ইউটিউবে অশ্লীলতার ছড়াছড়িঃ আটক কমেডিয়ান চিকন আলী

আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড, র‍্যাব পরিচয়ে টিকটকে সেলিব্রেটি!

তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন মেয়েকে চকলেট কিনে দেওয়া ও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাত করে শিশুটির চাচা রেজাউল। পরে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাবা আমির হোসেন নিজেই। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পর বাবা নিজেই গ্রামে মাইকিং করে এবং বিভিন্ন স্থানে শ্বশুর-শাশুড়িসহ খোঁজাখুঁজি করেন। পরে থানায় জিডি ও মামলা দায়ের করেন।

শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধারের পর ব্যবহৃত গরুর খাবারের ফিডের বস্তার সূত্র ধরে বাবা আমির হোসেনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এ ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্ধার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে গ্রেফতাররা হলেন- নিহতের বাবা আমির হোসেন (২৫), রবিউল আউয়াল (১৯), রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও সোহেল রানা (২৭)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সংগে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামি

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। ফাহিমা’র বাবা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজের পর ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন ৭ ও ৮ নভেম্বর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে। এমনকি গত ৮ নভেম্বর ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেয়।

পরে ১৪ নভেম্বর পুলিশ দেবিদ্বারের কাচিসাইর গ্রামের একটি ডোবা থেকে ভিকটিমের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত করে নিহতের পরিবার। ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত বাবাসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারে সমর্থ হয় বলে জানান র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ নভেম্বর রাতে রেজাউল ইসলাম ইমনের ফার্নিচার দোকানে ভিকটিমের বাবা আমির হোসেন টাকার বিনিময়ে রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানাকে সংগে নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যার জন্য ধারালো ছুরি ও হত্যার পর মৃতদেহ লুকানোর জন্য দুটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে। গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কৌশলে চকলেট কিনে দেওয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানা’র সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে শিশু ফাহিমাকে নিয়ে যায়। সেখানে ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধে ফাহিমাকে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন:
৪০০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ কিশোরীর

র‌্যাগ ডে পালনের নামে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি! (ভিডিও)

তিনি আরো বলেন, হত্যার পর ফাহিমা’র মৃতদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমন-এর গরুর গোয়ালে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানা’র সিএনজিতে করে আমির হোসেন, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমা’র মরদেহ কাচিসাইরে কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।

হত্যাকারীদের শনাক্ত করা প্রসংগে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় মৃতদেহ ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যায়। সেখানে ইমন-এর বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখে র‌্যাব। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ অন্য আসামিদের।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর আমরা আমির হোসেনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার নিজ সন্তানকে হত্যা নিয়ে অনুশোচনা নেই। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আমির। লাইলি আক্তারকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি।

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: