• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিনাপুঁজিতে লাভ পেয়ে ইয়াবা থেকে ‘আইস’-এ ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ২০ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ২০:০০, ২০ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
বিনাপুঁজিতে লাভ পেয়ে ইয়াবা থেকে ‘আইস’-এ ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা

গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন কিংবা ইয়াবা ঠেকাতে রীতিমত যখন হিমশিম খাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ঠিক তখনি নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। অতীতের সব মাদককে ছাড়িয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে এটি। দেশে উচ্চশ্রেণির মাদকসেবীদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস।

ইয়াবার চেয়েও অন্তত ৩০ গুণ শক্তিশালী হওয়ায় এই মাদককে নেশাগ্রস্তরা যেমন নিজেদের পছন্দের শীর্ষে রেখেছে, তেমনি লাভের দিক থেকে অন্যান্য মাদকের তুলনায় এই মাদকে লাভ বেশি হওয়ায় মাদক কারবারিরাও এখন ইয়াবা থেকে এই মাদকে ঝুঁকছে। কারণ এই মাদক পাচার করার কাজ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত দেশীয় কারবারিদের অগ্রিম কোনো টাকা দিতে হয় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে মাদক পাচার করতে পারলে লাভের অংশ পায় দেশীয় মাদক কারবারিরা। ফলে বিনাপুঁজিতে কোটি টাকা আয়ের নতুন পথ পেয়েছে মাদক কারবারিরা।

মাদক দ্রব্য অধিদফতর বলছে, ইয়াবা তৈরির মূল কাঁচামাল হচ্ছে এমফিটামিন। এটি ইয়াবায় থাকে মাত্র পাঁচ ভাগ। অন্যদিকে ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। অর্থাৎ ইয়াবা তৈরির মূল যে কাঁচামাল সেটিই আইস। তাই ইয়াবার তুলনায় আইসের প্রতিক্রিয়া ২০-৩০ গুণ বেশি হয়। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কেমিক্যাল পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস এবং ইয়াবা ভিন্ন হলেও দুটোই মাদক হিসেবে ভয়ংকর। ইয়াবায় যে পরিমাণ এমফিটামিন থাকে, সে তুলনায় আইসে প্রায় ৯৮ শতাংশ বেশি থাকে এমফিটামিন। তাই আইসকে বলা হয় ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল।

নিরাপত্তার বাহিনীর একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় বর্তমানে অন্য সব মাদকের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় মাদক আইস। এর মূল কারণ, অভিজাত শ্রেণির নেশাগ্রস্তরা, টাকা নয়, কতো বেশি নেশাসক্ত হতে পারে সেটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যে কারণে বেশি টাকা ব্যয় হলেও তারা আইস সেবন করে। তাদের এই চাহিদাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে ফায়দা নিচ্ছে ইয়াবার কারবারিরা। আইসে ইয়াবার তুলনায় ১৫-২০ গুণ অর্থ লাভ হয় বলে ইয়াবা কারবারিরাও এখন ইয়াবা থেকে আইসে মনোযোগ বাড়াচ্ছে।

অপর একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আইস পাচারে জড়িতদের ৯০ ভাগ ইয়াবার কারবারি। এই কারবারিরা রাজত্ব গড়েছে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার এলাকায়। এই কারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার করার কারণে মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত। তারা এই কারবারিদের হাতেই কোটি কোটি টাকার আইস তুলে দিচ্ছে বিনাপুঁজিতে। 

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- আইস যেহেতু ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল, তাই এর মাধ্যমে যদি দেশেই ইয়াবা তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয় তাহলে বিপর্যয় বাড়বে। এজন্য গোয়েন্দা সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে কোনো ইয়াবার কারখানা রয়েছে কিনা সেটির অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ৫০-৬০ জন ব্যক্তিকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যারা ইয়াবা কারবারি হিসেবে তালিকাভূক্ত। এই কারকারিদের নজরদারির মাধ্যমে র‌্যাব ইতোমধ্যে আইসের কয়েকটি চালানও ধরেছে। ইয়াবা তৈরির মূল কাঁচামাল এমফিটামিন রয়েছে ক্রিস্টাল মেথ-এ। যেটিকে মাদকসেবীরা নাম দিয়েছে আইস। মূলত এই আইস যখন পাউডার বা দানা অবস্থায় থাকে তখন এটি এমফিটামিন। এই এমফিটামিন যেহেতু দেশে পাওয়া যাচ্ছে তাই আমরা খতিয়ে দেখতে চাচ্ছি দেশে কোনো ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে কি না।

তিনি বলেন, আইস সরাসরি সেবনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার বয়স মাত্র দেড় দু’বছর হবে। কিন্তু এই আইস তো দেশে সরাসরি সেবনের জন্য আনা হয়নি। নিশ্চয় ইয়াবা তৈরির জন্যেই আনা হয়েছে। ২০১৮ সালে এমন ধারণা থেকেই মাদক দ্রব্য অধিদফতর নারায়ণগঞ্জের ইয়াবা তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছিলো। যেখান থেকে ইয়াবা তৈরির নানান সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছিলো। এরপর আর পাওয়া না গেলেও থাকার আশংকা তো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন‌্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, এক কেজি আইসের দাম প্রায় দুই কোটি টাকা। কিন্তু এই এক কেজি আইস বহন করতে যতোটা না সহজ তার চেয়ে বেশি কঠিন দুই কোটি টাকার ইয়াবা বহন করা। তাই অল্প পরিমাণের মাদকে বেশি লাভ হওয়ার কারণে মাদক কারবারিরা আইস পাচারে ঝুঁকছে। এছাড়া আরও একটি কারণ হলো- কারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচার করার কারণে একটা সময় বিশ্বস্ত হয়ে উঠে। তাই নতুন বাজার ধরতে কৌশল হিসেবে বিনাপুঁজিতে সরবরাহকারীরা কোটি টাকার মাদক তুলে দিচ্ছে দেশীয় কারবারিদের হাতে। এতে যদি কোনো কারবারি ধরাও পড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তবে কোনো টাকা দিতে হয় না মাদক সিন্ডিকেটকে। আর যদি নজর এড়িয়ে আইস বিক্রি করতে পারে, তবে তার ৭০ শতাংশ টাকা ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয়। এমন সুবিধা পেয়ে আইস পাচারে জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবার কারবারিরা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেকনাফ ও কক্সবাজারকেন্দ্রিক বেশ কিছু ব্যক্তি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। তবে আমাদের কাজের স্বার্থে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।

বিভি/এসএইচ/এসডি

মন্তব্য করুন: