• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সাকরাইনকে ঘিরেও চলছে আতশবাজি ফোটানোর অসুস্থ আয়োজন

সাদ্দাম হোসাইন ও কেফায়েত শাকিল

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৫:২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ

জন্মগতভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলো শিশু উমায়ের। চলছিলো চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলার চেষ্টা। কিন্তু সেই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইটের অসুস্থ উদযাপন। সেই রাতে আতশবাজির বিকট শব্দের ভয়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারিয়েছে ৪ মাস বয়সী শিশু তানজিম উমায়ের। আদরের সন্তানের এমন যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দৃশ্য মনে পড়তেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা ইউসুফ রায়হান।

শুধু উমায়ের নয়। থার্টিফার্স্ট নাইটের আতশবাজির বিকট শব্দে ভয় পেয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা কম নয়। 

কয়েকজন শিশু ও তাদের অভিবাবকরা জানায়, আতশবাজির বিকট শব্দে শিশুরা ভয় পেয়েছে। এমনকি কারো কারো শরীরে ভয়ে জ্বর এসেছে।

চিকিৎসকরাও বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত শব্দে নিদ্রাহীনতা বা মাথা ব্যাথা থেকে শুরু করে ঘটতে পারে হার্টঅ্যাটাকও।

নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আতিকুল রহমান বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আতশবাজির বিকট শব্দে শুধু কানে সমস্যা নয়, নিদ্রাহীনতা থেকে শুরু করে শিশু ও বয়স্কদের হৃদরোগও হতে পারে। সুতরাং এটি নিয়ে এখন নতুন করে ভাববার সময় এসেছে।

অনুসন্ধান বলছে, ইংরেজী বর্ষ বরণে ফুটেছে শত কোটি টাকার আতশ। আইনে নিষিদ্ধ হলেও সাকরাইনকে ঘিরেও চলছে এমন অসুস্থ উদযাপনের প্রস্তুতি। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কীভাবে হাতে হাতে পৌঁছাচ্ছে আতশবাজির পণ্য, জানার চেষ্টা করেছে বাংলাভিশন ডিজিটাল

প্রকাশ্যে কোথাও বেচা-কেনা হয় না। কিন্তু ক্রেতা সেজে পুরান ঢাকার চকবাজার, শাখারী বাজার ও তাঁতী বাজারের অলিগলিতে হাঁটলে বিক্রেতাই খুঁজে নেয় ক্রেতাকে। রাস্তায়ই হয় দরদাম, চলে হরদম বেচা-কেনা।
 
কয়েকজন বিক্রেতার সংগে কথা বলে জানা যায়, চাহিদা থাকায় ঝুঁকি নিয়েই বিক্রি করছেন এসব নিষিদ্ধ বিস্ফোরক। দেশের বাইরে থেকে আসছে কুমিল্লা, সিলেট ও হিলি সীমান্ত হয়ে দেশে ঢুকছে এসব পণ্য। 

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আতশ বিক্রেতা বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, লুকোচুরি করেই আতশ বিক্রি করি। পুলিশ যাতে জানতে না পারে সেভাবেই আতশ বিক্রি করা হয়। 

বিস্ফোরক আইনে আতশ আমদানি, এর ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও মজুদ করা দণ্ডনীয় অপরাধ; যা নজরদারির দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদফতরের। অথচ প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি নিয়ন্ত্রণে তাঁদের সক্ষমতা নেই। 

বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর। তাদের এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে কারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই দাবি করে পরিবেশবিদরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যোগসাজশে হচ্ছে এমন অপরাধ। দাবি তোলেন সাকরাইনের আগেই এমন উদযাপন আইনিভাবে বন্ধ করার।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, থার্টিফার্স্টের আগের দিন এবং সেদিন রাত ও পরের দিনের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, একদিনের ব্যবধানে পরিবেশের বায়ুমান ও শব্দ দূষণের মাত্রা ছিলো কয়েকগুণ বেশি। যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

আইনে নিষিদ্ধ থাকার পরও কেন এটি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পুলিশ বলছে, আতশ আমদানিকারক এবং বিক্রেতা উভয়ই রয়েছে তাদের নজরদারিতে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস্) মো. ফারুক হোসেন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সম্প্রতি আমাদের গোয়েন্দা লালবাগ টিম বিপুল পরিমান বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করেছিলো। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, যারা আতশ আমদানি এবং বিক্রি করছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শীঘ্রই আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। 

উৎসব মানেই আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ যেন কারো ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকে সব পক্ষকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান নগরবাসীর।

বিভি/এএন

মন্তব্য করুন: