• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার কে এই ‘মূল হোতা’ রূপা?

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২২ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ২০:৪১, ২২ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার কে এই ‘মূল হোতা’ রূপা?

ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর কাফরুল ও কাকরাইল থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন মাহবুবা নাসরিন রূপা। তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী।

মাহবুবা নাসরিন রূপা’র ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, তিনি ছাত্রলীগ ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। একই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রূপা’র গ্রামের বাড়ি উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভূঁইপুর গ্রামে। 

তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু গণমাধ্যমকে জানান, মাহবুবা নাসরিন রূপা ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী। বর্তমানে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। 

দুপচাঁচিয়া উপজেলার স্থানীয় অনেকেই জানান, নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান হলেও রূপা এলাকায় সেভাবে থাকেন না। মাঝে-মধ্যে আসেন, আবার চলে যান ঢাকায়। এলাকায় এলে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের সংগে তোলা তাঁর ছবি মোবাইল ফোনে লোকজনকে দেখাতেন তিনি।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রূপা ও আজাদ মূল হোতা বলে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ গতকাল দুপুরে কাকরাইলের নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দু’জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, কাফরুল সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র ও উত্তর পত্রের খসড়াসহ আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রূপাকে টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ গ্রেফতার করে। পরে রূপা’র দেওয়া তথ্যমতে সিজিএ থেকে বহিষ্কৃত কর্মকর্তা আজাদসহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গতকাল প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য দুপুর ৩টা থেকে বিকাল শোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আামাদের কাছে তথ্য ছিলো এর আগেও বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপস এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর সমাধান করে সরবরাহ করতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ডিবির গুলশান বিভাগ তথ্য পায়, চক্রের সদস্যরাই পরীক্ষার্থী সেজে কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে যায়। প্রশ্নপত্র পাওয়ার সংগে সংগে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তারা ডিভাইসের মাধ্যমে চক্রের অপর সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। বাইরে থেকে তারা প্রশ্ন সমাধান পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রে। চাকরি প্রার্থীদের এভাবেই তার পাস করাতেন তারা। এজন্য প্রতি চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিতেন। অগ্রিম হিসেবে নেওয়া হতো দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, গ্রেফতারবকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯-এ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারা অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করতো। 

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা এর আগেও বিভিন্ন ব্যাংকসহ সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক, বিকাশের মাধ্যমে এবং নগদে হাতিয়ে নিয়েছিলো। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: