মারামারির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বাদীর মেয়েকে ধর্ষণ করলো পুলিশ
অভিযুক্ত এসআই শামছুল হক
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে জমিজমা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বাদীর মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণের অভিযোগে ওই থানার এসআই (নিরস্ত্র) শামছুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তোভোগী পরিবার।
ভিকটিম জানান, জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে মারামারির ঘটনায় ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর ফুলছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তোভোগী নারীর মা। ওই মামলার তদন্তে এসে বাদীর বিবাহিত মেয়ের দিকে নজর পড়ে এসআই (নিরস্ত্র) শামছুল হকের (বিপি নং-৭৬৯৪০৬৫১৯৮)। মামলা কাজের অযুহাতে ২৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার ওই বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় শামছুল। রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর থেকে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকে। এমন কি ওই মেয়ে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে গিয়েও ধর্ষণ করে এসআই শামছুল হক। এতে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে যায় ধর্ষিতা।
মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা হলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুকৌশলে ভিকটিমকে হোমিও ঔষুধ সেবন করান শামছুল হক। এতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গর্ভপাত ঘটে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হলে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নিজে বাদী হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্তকারী কর্মকর্তা শামছুল হককে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
ধর্ষণের বিষয়ে ফুলছড়ি থানায় মামলা করতে গেলে টালবাহনা করে সময়কালক্ষেপন করা হয় এবং টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয় মামলার অভিযোগপত্রে।
ভিকটিমের খালা বলেন, দুই ভাগনি ও ছোট ভাগিনা আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। কিছুক্ষণ পর এসআই শামছুল হক আমার বাড়িতে এসে বলে টাকা পাঁচশো নিয়ে যান বাজারে যেয়ে ফলমুল নিয়ে আসেন আর চা চক্রের ব্যবস্থা করেন। ওনার টাকা না নিয়ে আমি বাজারে গিয়ে খরচ নিয়ে বাড়িতে এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে দেখি দারোগা প্যান্ট-শাট পড়ছে। তখনি তাকে দুটা ধাপ্পর মারি। আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে ওকে আমি বিবাহ করবো। মানসম্মানের ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলিনি।
এসআই শামছুল হকের মোবাইল ফোনে কল করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ব্যস্ততার অযুহাত দিয়ে কেটে দেন। তারপর আর কল রিসিভ করেননি।
ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কাওছার আলী বলেন, আমার থানায় ভিকটিমের মা জমি নিয়ে মারামারির জন্য একটি মামলা করে। ওই মামলায় শামছুল হক তদন্ত করে আসামি ধরে আদালতে চার্জসীট দেন। তদন্তকালে শামছুল বাদির পরিবারের সাথে কি করছে, তা আমি জানি না। ভিকটিম শামছুলের বিরুদ্ধে এ থানায় কোন অভিযোগও দেয়নি। তবে শামছুলের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। সেটা তদন্ত করছে পিবিআই।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এসআই মো. জুলফিকার আলী ভুট্টু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রায় তিন মাস পর গত ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: