• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

৮ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে রাজধানীতেই বসবাস করছিলেন আমিনুল

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৩ জুলাই ২০২২

আপডেট: ১৩:২৫, ৩ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
৮ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে রাজধানীতেই বসবাস করছিলেন আমিনুল

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দীর্ঘদিনের পলাতক আসামি কেএম আমিনুল হক ওরফে রজব আলী (৬৯) কে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

গ্রেফতারের পর র‍্যাব জানায়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ হওয়ার পর থেকে আমিনুল হক রাজধানীর কলাবাগান ও ধানমন্ডি এলাকায় আত্মগোপনে থেকে বসবাস করছিলেন। এই দুই এলাকায় তিনি রজব আলী নামে পরিচয় দিতেন এবং তেমন বাহিরে যেতেন না। পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান ও অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলতেন তিনি। সর্বশেষ গতকাল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রবিবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর কে এম আমিনুল হক এর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২০১৬ সালের ১৮ মে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল আমিনুল হক এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এবং গত ৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলী’কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। এরপর থেকে দন্ডিত পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর আভিযানিক দল রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আমিনুল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মনবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘ এর কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন ও নির্যাতন করে। এছাড়াও, স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের অপহরণ পূর্বক রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে ৩টি মামলা রুজু হয়। ওই মামলাগুলোতে তার ৪০ বছর সাজা হয় কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। গ্রেফতারকৃত ১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান গমন করে। 

১৯৯৭ সালে তিনি নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যায়। এ সময় তিনি গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করতে থাকে। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।
 
গ্রেফতারকৃত আমিনুল “আমি আলবদর বলছি” ও “দুই পলাশী দুই মীরজাফর” নামে দুইটি বই প্রকাশ করে। যেখানে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে নিজেকে “আলবদর কমান্ডার” দাবী করে। অতঃপর ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত “দুই পলাশী দুই মীরজাফর” বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশন করায় সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা রুজু হয়।   

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমিনুল হক একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেখানে তার পূর্বপরিচতজনরা যারা যুদ্ধের সময় আল বদরে ছিল তাদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তাই বারংবার দেড় মাস দুমাসের জন্য পাকিস্তানি গিয়ে থাকতেন আমিনুল হক।

বিভি/এসএইচ/এজেড

মন্তব্য করুন: