পুঁজিবাজার থেকে পাঁচটি সন্দেহজনক লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে বিএফআইইউ
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ৫টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। বিএফআইইউ’র সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএফআইইউ’র প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউ এর উপ-প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সরোয়ার হোসেন, ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্সের পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
বিএফআইইউ’র বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। যার সিংহ ভাগই ব্যাংকখাত থেকে। যার আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ৬০ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
বিএফআইইউ’র বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ২৯৫ শতাংশ।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মানি মার্কেটের মতো ক্যাপিটাল মার্কেট সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। যেখানে দেখা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪টি লেনদেন হয়েছিলো। সেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৫টিতে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে বিএফআইইউএর তাদের প্রতিবেদনে এসব লেনদেনে কথা টাকা প্রচার হয়েছে তার কোনো তথ্য দেয়নি।
প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘বিএফআইইউ তার কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এ বছরের প্রতিবেদনে পূর্বের বছরের ন্যায় বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি হুন্ডি, অবৈধ গেমিং/বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও ফরেক্স ট্রেডিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের বিষয়ে পৃথক অধ্যায় সংযোজন এবং একাধিক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহ হতে বিএফআইইউতে দাখিলকৃত বিভিন্ন রিপোর্টের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহ বিএফআইইউ বরাবর সর্বমোট ১৪,১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেন/কার্যক্রম প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল করেছে; যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এটি মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বিএফআইইউএর কঠোর অবস্থান ও অপরাধের ধরন পরিবর্তনের প্রতিফলন মর্মে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে আর্থিক ব্যবস্থায় লেনদেন কার্যক্রম বেড়ে গিয়েছে এবং এর ফলে গত বছরের তুলনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে নগদ লেনদেন বিবরণীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মর্মে তিনি অবহিত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বিএফআইইউ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৩৩টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, বিএফআইইউ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ১০৭১টি তথ্য বিনিময় করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
বিগত অর্থবছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে ‘Basel Anti Money Laundering (AML) Index-2023’ এ বাংলাদেশ ৫টি দেশকে পিছনে ফেলে র্যাং কিং এ বিগত বছরের ৪১ নম্বর দেশ হতে ৪৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন বলেন, দেশ থেকে একবার টাকা পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা খুব কঠিন। ফেরত আনতে অনেকগুলো পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এছাড়া সব দেশের আইন-কানুন একরকম না। তারপরেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: