• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক ও অন্যায়: ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৩ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
ওষুধের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক ও অন্যায়: ক্যাব

অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে ভোক্তাদের অধিকার উপেক্ষা করে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) ‘ওষুধের অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ কথা বলেছে।

প্রধান অতিথি ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, সেটি যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত কী না সন্দেহ আছে। একই সঙ্গে দুই শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। এখন ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

‘এর বাইরের ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভর করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর। এতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। আমরা চাই জেনেরিক নামের যে দু’শতাধিক ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের ছিল, তা পুনর্বহাল করা হোক।’

গোলাম রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। এখন আমরা ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদন করি। দেশে উৎপাদিত ১২৪টি ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে কোনোরকম জবাবদিহিতা ছাড়া মূল্য বৃদ্ধির যে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমানে ঔষধ প্রশাসনের দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি স্যালাইনের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি খুবই বাজে একটি নজির। ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা আপত্তি জানানো সত্ত্বেও তা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বলে মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা শুধু অনৈতিক নয়, বেআইনিও।’

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, ‘দেশে ওষুধ শিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ৯৭ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলোর অধিকাংশই আসে ভারত ও চীন থেকে। উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকেও কিছু কাঁচামাল আসছে। ‘নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে, যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধা বহাল থাকবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণ করলেও সামাজ্যবাদের আগ্রাসন থেমে নেই। শুরুতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতো। এখনও তাদের ভূমিকা অদৃশ্যভাবে বহাল রয়েছে।

‘১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার ওষুধ শিল্পের ওপর কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ চালু করে। এক আদেশে দেশে উৎপাদিত মাত্র ১১৭টি জেনেরিক ওষুধ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে বাকি ওষুধ কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেয়। যদিও দেশে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ আইন ১৯৪০, ১৯৪৫ সালের ড্রাগ রুলস, ১৯৪৬ সালের দ্য বেঙ্গল ড্রাগস রুলস, ১৯৮২ সালের ড্রাগ অর্ডিন্যান্স এবং ২০১৬ সালের জাতীয় ওষুধ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এরপরও ১৯৯৪ সালের সেই আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। ওই আদেশের বলে পুরো ওষুধ শিল্পের নিয়ন্ত্রণ মূলত কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যায়।

ড. মঞ্জুর-ই-খোদা আরও বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সম্প্রতি আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের জন্য গঠিত টেকনিক্যাল সাব-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি ৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২১টি জেনেরিক ৫৮টি পদের কস্টিং শিট পর্যালোচনা করা হয়।

‘এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে কলেরা স্যালাইন, হার্টম্যান সলিউশন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ডেক্সট্রোজ, ডেক্সট্রোজ প্লাস সোডিয়াম ক্লোরাইড, মেট্রোভিজানল ও হিউম্যান ইনসুলিন। দেশে যখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী তখন ওষুধের মতো এতো প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ওষুধের মার্কআপ কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত।’

চলতি বছরের ২০ জুলাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৫৩টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

সরেজমিনে ফার্মেসিতে খুচরা ওষুধের তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্যাব জানায়, এসব ওষুধের মূল্য ছয় মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে শুধু প্যারাসিটামল সিরাপের মূল্য বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের মূল্য বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের মূল্য গত জুলাই মাস থেকে বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। ২০ মিলিগ্রামের একটি ওমিপ্রাজল ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ৫ টাকা। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬ টাকা। আর ২০ মিলিগ্রামের রেবিপ্রাজল মূল্য ছিল ৫ টাকা। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ টাকা।

এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের মূল্য বেড়েছে ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। প্রতিটি ৫০০ মিলিগ্রামের সিডিউরিক জিম ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে তা ৬০ টাকা। ২৫০ মিলিগ্রামের প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ৩০ টাকা, যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ টাকা।

উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের ওষুধের মূল্য বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। লুসার্টন পটাশিয়াম পাঁচ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেটের মূল্য ৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা। পাঁচ মিলিগ্রামের এমভোলোপিনের মূল্য ছিল ১০ টাকা। সেটি ১২ টাকা করা হয়েছে। দুই মিলিগ্রামের একটি প্রাজোসিন ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ১০ টাকা, হয়েছে ১২ টাকা। আর ৫ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট ১৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা করা হয়েছে।

ক্যাবের সুপারিশঃ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অনতিবিলম্বে বৃদ্ধি করা ওষুধের মূল্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা রিভিউ করার দাবি জানায় ক্যাব। ওই রিভিউ না হওয়া পর্যন্ত আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধের কাঁচামাল ও অন্যান্য ওষুধ আমদানিতে মার্ক-আপ কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্যালাইন তৈরি ও বাজারজাতকরণ সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা আইপিএইচ-এর মাধ্যমে করতে হবে।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: