• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সেশনজটের সাগরে ববি, ৮ মাসেও মেলে না বর্ষের ফলাফল

জয়নাল আবেদীন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৫ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
সেশনজটের সাগরে ববি, ৮ মাসেও মেলে না বর্ষের ফলাফল

৮ মাসেও মেলে না বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) বিভিন্ন বিভাগের বর্ষের ফলাফল। ফলে সেশনজটে আটকে যায় শিক্ষার্থীরা। একটি বর্ষ থেকে আরেকটি বর্ষে উত্তীর্ণ হতে হলে তাকে কমপক্ষে আটমাস সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। এমন চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন বিভাগে। যেসব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি তাদের এক সেমিস্টারের ফলাফল পেতে সময় গুণতে হয় ৪ থেকে ৬ মাস। 

হিসাব করে দেখা যায় দুই সেমিস্টারের অর্থাৎ বর্ষের ফলাফল পেতে সময় লাগে ৮-১০ মাস।অর্থাৎ ৮ মাসেও মেলেনা বর্ষের ফলাফল। অথচ,পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে সময় বাধা প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের।শিক্ষার্থীদের কাছে মনে হয় সেশনজটের সাগরে নিমজ্জিত তারা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ রয়েছে মোট ২৫ টি। বাংলা বিভাগ, গণিত, রসায়ন বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন বিভাগ, সমাজকর্ম, মার্কেটিং বিভাগ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি, মৃত্তিকা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, অর্থনীতি, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগসহ বেশকিছু বিভাগে ফলাফল দিতে সময় লেগে যায় ৫ থেকে ৮ মাস। যেসব বিভাগে সেমিস্টার, সেসব বিভাগে ফলাফল দিতে সময় নেয় ৩ থেকে ৬ মাস। আবার বর্ষ পদ্ধতি বিভাগ সময় নেয় ৬ থেকে ৯ মাস। 

একদিকে ফলাফল দিতে দেরি, অন্যদিকে পরীক্ষা নিতে দেরি। এদিকে প্রায় বিভাগে রয়েছে শিক্ষক সংকট। গত ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বরে শেষ হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা। তাদের ফলাফল দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৯ মে।অর্থাৎ প্রায় ৫ মাস পরে ফলাফল। এ বিভাগে অন্য বর্ষের আরো বেশি সময় লেগে যায় বলছেন শিক্ষার্থীরা।

একই বর্ষের বাংলা বিভাগের বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, ফলাফল প্রদান করে অক্টোবরে। প্রায় ৭ মাস পরে ফলাফল দেয় এই বর্ষের পরীক্ষার্থীদের। রসায়ন বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ফলাফল দিতে সময় নিয়েছে ৬ মাস। লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল দিতে সময় লাগে ৬ মাস।

গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থবর্ষের ফলাফল দিতে সময় লেগেছে ৭ মাস। গণিত বিভাগের একটি সেমিস্টারের ফল প্রকাশ করতে সময় লেগেছে আটমাস। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সেমিস্টারের ফলাফল মেলে প্রায় ৭ মাস। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের একই অবস্থা। প্রায় সব বিভাগের চিত্র একই। তবে গড় হিসাব করলে পাওয়া যায় দুই সেমিস্টারের অর্থাৎ বর্ষের ফলাফল মেলে ৮ মাসেরও বেশি। ফলাফল দিতে দেরি হওয়ার কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের আন্তরিকতার অভাবের কথা বললেও শিক্ষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা।

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. মো. শফিউল আলম বলেন, আমাদের সকলের আন্তরিকতা রয়েছে।কোন শিক্ষক চায় না ফলাফল দেরি করতে। দ্বিতীয় পরীক্ষক বাহিরের হওয়ায় ফলাফল প্রক্রিয়া হতে যতটুকু সময় লাগে তার মধ্যেই ফলাফল প্রস্তুত করে ঘোষণা করি।এরইমধ্যে যতটুকু সময় লাগে। তবে এখন উপাচার্য মহোদয় সেশনজট কমানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।আগামিতে দ্বিতীয় পরীক্ষক অভ্যন্তরীণ থেকে নেওয়া হবে। ফলে প্রক্রিয়াটা কম হবে এবং দ্রুত ফলাফল দিতে পারবে।

মানবিক অনুষদের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা হয়।তারা জানান, মূলত ফলাফল দিতে দেরি হয় বহিঃস্থ শিক্ষকের কাছে খাতা গেলে। কারণ, খাতা পাঠানো ও নিতে সময় লাগে বেশি।সেখানে বিভাগ থেকে তো ফলাফল প্রক্রিয়া করতে আরো সময় লাগে।তিন থেকে চার মাসের নিচে কোনভাবেই সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।তারপরেও আমাদের শিক্ষক ও জনবল সংকট তো আছেই।আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে ফলাফল দিতে দেরি হয়।আমাদের শিক্ষক ও পাঠদান কক্ষ সংকট রয়েছে এটা সত্য। তার মধ্যে শিক্ষকদের আন্তরিকতার যে অভাব রয়েছে সেটাও সত্য। আর আনফেয়ার গ্রেডিং বা খাতায় অনৈতিক মূল্যায়ন সিস্টেম তো আছেই।

বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ৩০০ জন।শিক্ষক রয়েছে ২১০ জন। তারমধ্যে পাঠদান নিচ্ছে বর্তমানে ১৬৭ জন। বাকি শিক্ষকরা রয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি নিতে শিক্ষা ছুটিতে।গড়ে ৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র একজন শিক্ষক। কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে মোট ২৭৩ জন।হিসাব করে দেখা যায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বিভাগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যানুযায়ী খুবই নগণ্য। যেখানে অর্গানোগ্রামভুক্তে ৪৫৩ জন শিক্ষক থাকার কথা সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ছাড়কৃত ২১০ জন।একটি সূত্র বলছে, অর্গানোগ্রামের হিসাব অনেক আগের। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে,তাই শিক্ষক সহ জনবলের চাহিদাও বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক ও বিভিন্ন সংকট দূর করবেন বলে জানায় সূত্রটি।

শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান তাদের হতাশার কথা। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, খাতা কলমে ৬ মাসের মধ্যে সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার কথা থাকলেও ৮মাসে নিয়ে থাকেন অনেক বিভাগের পরীক্ষা। ফলে পরের পরীক্ষা তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে অনেক বিভাগ শেষ করেন। আবার অনেক বিভাগ বছরের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল দিতে দেরি করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতি সেমিস্টারের ফলাফল দিতে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস লেগে যায়।কোন সময় আটমাসেও গড়ায়। একদিকে শিক্ষক সংকট তো আছেই,অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে, চারবছরের স্মাতক শেষ করতে ছয় বছর বা তারবেশি সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা সহ চাকরিতে আবেদন করতে বেগ পোহাতে হয়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, যেসকল বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি,সেখানে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়ার কথা লিখিতভাবে উল্লেখ আছে। কিন্তু আমাদের খাতা বাইরের দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়।সেখানে দেরি হলে পরীক্ষার ফলাফল দিতে এমনিতেই দেরি হয়।তাছাড়া বাইরে খাতা গেলে তিনমাসের আগে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়না।তাই অনেকে মৌখিকভাবে ১২০ দিনের কথা বলেন। সম্প্রতি সেশনজট কমানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় পরীক্ষক অভ্যন্তরীণ থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।তিনি সেশনজটের জন্য শিক্ষক ও জনবল সংকটের কথাও স্বীকার করেন।

সেমিস্টারের ফলাফল দেরি,শিক্ষক সংকট,কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ কক্ষ সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ৬ থেকে ৭ টি ব্যাচের বিপরীতে পাঠদান করায় গড়ে ৫ থেকে ৬ জন শিক্ষক। প্রাণরসায়ন ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে চারজন শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আছে ছয়জন, রসায়ন বিভাগে সাতজন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে চারজন, উপকূল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে পাঁচজন, অর্থনীতি বিভাগের সাত জন, মার্কেটিং বিভাগে ছয়জন, ইতিহাস বিভাগে চারজন ও গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগে তিনজন ইতিহাস বিভাগসহ বেশকিছু বিভাগে অল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হয়। অনেক শিক্ষক উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে ছুটিতে রয়েছেন। ফলে সেশনজটের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন রয়েছে আক্ষেপ, তেমনি সেশনজটের জন্য রয়েছে অনেক হতাশা। তবে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত ২৩ জানুয়ারি ৮২ তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন হয় বহিঃস্থ শিক্ষকের পাশাপাশি দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের নিয়োগের কথা। যেটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।যাতে সেশনজট কমানো সম্ভব হয়। 

এসব সংকটে সেশনজট কমানোয় যেন দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে মাত্র একটি কক্ষ, তাও সেটি মৌখিকভাবে। অনেক সময় শিক্ষকরা নিজের বসার স্থানও পায় না। একটা ছোট রুমে পাঁচ-ছয় জন শিক্ষককে গাদাগাদি করে বসতে হয়।তবে ভবন নির্মানের জন্য বর্তমান উপাচার্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান একটি সূত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা বহুবার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। সম্প্রতি দ্বিতীয় ফেস্টের কাজের জন্যেও আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। কয়েকমাসের মধ্যে ভিজিবিলিটি পরীক্ষা করতে আসতে পারেন তারা। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকট কাটিয়ে উঠতে।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2