• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

করোনাকালে বিয়ের চাপে নাজেহাল শিক্ষার্থীরা 

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৬ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ২১:৩৯, ১৬ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ

‘দেড় বছর যখন একটা মেয়ে বাসায় থাকে, তখন পরিবারের কাছে মেয়েটি বোঝা হয়ে যায়। পরিবার এবং সমাজ থেকে বিয়ের জন্য প্রেসার আসতে থাকে। তখন আসলে পড়াশোনাটাও হয় না। আমাকেও বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিলো। আমি একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম মানসিকভাবে। ভাবছিলাম, বিয়ে করলে আমার পড়াশোনার কী হবে? আমার স্বপ্ন তো শেষ হয়ে যাবে।’ একনাগাড়ে এভাবেই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সালসাবিলা আহমেদ।

শুধু সালসাবিলাই নন। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, করোনাকালীন মানসিক সমস্যায় ভোগা নারী শিক্ষার্থীর হার পুরুষের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। জরিপে অংশ নিয়েছেন ৯৯৯ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৫৫২ জন নারী শিক্ষার্থী। ৮৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই করোনাকালে নানান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। 

রাজধানীর হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন-এর করোনাকালীন অভিজ্ঞতাও অনেকটা একইরকম। ‘হল বন্ধ করে দিলে আমি গ্রামে চলে যাই। অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর দেখলাম, আমি ইন্টারনেট সমস্যার কারণে ক্লাস করতে পারছি না। তখনই হতাশ হয়ে পড়ি। বন্ধুদের বাসায় বিয়ের চাপ আসা শুরু করলো। আমার পরিবারে খুব একটা চাপ না দিলেও আমি প্রেশার অনুভব করা শুরু করলাম।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের করা ‘করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয়’ শীর্ষক জরিপ চলে গত ১২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যাতে দেশের ৯২টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৫৫২ শিক্ষার্থীর বক্তব্য নেওয়া হয়। এই বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬১ শতাংশ নারী। তৃতীয় লিঙ্গের ছিলেন ১ জন। শিক্ষার্থীদের বয়স ছিলো ১৮ থেকে ২৮ বছর। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সী।

জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বিষণ্ণতাসহ নানান মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এদের মধ্যে সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই বেশি। করোনার এই দেড় বছরে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থীদের ৮৬ দশমিক ২ ভাগ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক সমস্যায় ভোগা নারী শিক্ষার্থীর হার পুরুষের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। অঞ্চল ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি মানসিক সমস্যায় সিলেটের শিক্ষার্থীরা।

জরিপ বলছে, দ্রুত অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার হার ছিলো তুলনামূলক কম। সে তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। তবে অনলাইন ক্লাস নিয়ে অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।

একই সংস্থার ‘আত্মহত্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তরুণদের ভাবনা— করোনায় তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিপর্যয়’ শীর্ষক জরিপ বলছে  করোনাকালে ২১.৩ শতাংশ তরুণ তরুণী আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থীর করা এই জরিপ নজর কেড়েছে বোদ্ধামহলে।

দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর শুরু হয়েছে ক্লাস পরীক্ষার চাপ। এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে আবারও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, ‘এখন আমাদের নতুন হতাশা কাজ করছে। এতোদিন পড়াশোনা থেকে একপ্রকার দূরে ছিলাম। এখন একের পর এক পরীক্ষা হবে। এতো অল্প সময়ে সবকিছু কীভাবে শেষ করবো তাই ভাবছি। আরেকটু সময় দিয়ে সবকিছু করলে ভালো হতো।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সামিরা আক্তার সিয়াম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কেনো এতো শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে, এই চিন্তা থেকেই জরিপের বিষয়টি নিয়ে ভাবেন তাঁরা। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে তাঁর পরামর্শ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ, মনোরোগ নিয়ে জাতীয় হটলাইন সেবা চালুসহ সচেতন বাড়াতে নানান উদ্যোগ হাতে নেওয়ার।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবার-সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নাফিজা ফেরদৌসী বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ‘এখন সব জায়গায় শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি নতুন পরিবেশের সংগে খাপ খাওয়াতে না পারে তাহলে সেখান থেকে তারা চাইলে হেল্প নিতে পারে। একইসংগে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পর্যায়েও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিবার- সবার সচেতনতা থাকলেই এই সমস্যা থেকে আমরা ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।’

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: