• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

র‌্যাগ ডে পালনের নামে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি! (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৬ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৩:১৯, ১৭ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ

করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর এসএসসি-এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করে সরকার। হঠাৎ করে এবছরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদায় বা দোয়া অনুষ্ঠানের পরিবর্তে র‌্যাগ ডে পালন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। 

পরীক্ষার্থীদের প্রত্যেকেই পরিধেয় টি-শার্টে স্মৃতির জানালা থেকে উঁকি দিয়ে লেখেন মধুময় স্মৃতি কথা। কেউ কেউ ভালো কথা লিখলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই টি-শার্টে লিখেছেন অশ্লীল শব্দ, বাক্য। যেগুলো দেখে বিব্রত হচ্ছেন শিক্ষক-অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরাও। র‌্যাগ ডে পালনের ছবি দিয়ে বানানো হচ্ছে টিকটক ভিডিও। ইতিমধ্যে সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।

রাজধানীর উদয়ন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে র‌্যাগ ডে চালু রয়েছে। যার প্রভাব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর পড়েছে। ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্ক এটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেয়াদবির পর্যায়ে চলে গেছে বিষয়টা। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া উচিত, একই সংগে প্রতিষ্ঠান থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যেন বাচ্চারা এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারে।

শুধু তাই নয়, র‌্যাগ ডে’র নামে কোথাও কোথাও উশৃঙ্খলতা, অশ্লীলতার পাশাপাশি ঘটেছে যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও। সমালোচনার মুখে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কালচারকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শিক্ষানুরাগীরা। তাঁরা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা অফিসাররা দায়িত্বে অবহেলা করছেন।

ব্যবসায়ী মাসুম খান বলেন, বাচ্চাদের শাসন করতে হবে। আমরা বাবা-মা সন্তানদের সময় দিতে পারি না। তাদের সময়ের হিসেব নিতে পারি না। যার ফলেই তারা লাইনচ্যুত হয়ে যায়, উশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়-এর পরিচালক নিজাম উদ্দিন (সিআইপি) বলেন, এটি একটি সামাজিক অবক্ষয়। প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা, খেলাধুলা, স্পোর্টস এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এটি রোধ করতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজিং কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তি সভাপতি পদে আসা উচিত একই সংগে যোগ্য শিক্ষকও দরকার। অন্যদিকে শিক্ষা অফিসারদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। তাঁরা সরকারের বেতন নেন অথচ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো মনিটরিং করেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের উশৃঙ্খলতা থেকে বের হয়ে আসতে ব্যবস্থা নিতে হবে অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, টি-শার্টে যেসব মন্তব্য চোখে পড়েছে এটি আমরা আন্দাজও করতে পারি না। এটি সামাজিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন অনুমতি দিলেন। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অভিভাবকদের একটি বড় ভূমিকা আছে। সবচেয়ে বড় ভূমিকা শিক্ষকদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, র‌্যাগ ডে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য না। বিদেশি সংস্কৃতি। কারা এনেছে তাও জানি না। র‌্যাগ ডে’র পরিবর্তে বলছি শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান। বন্ধুদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস করবে তার মানে এই নয় যে, র‌্যাগ ডে’র নামে উশৃঙ্খলতা, প্রচন্ড শব্দে ব্যান্ড বাজানো, রুচিহীনভাবে গান বাজানোকে আমরা ডিসকারেজ করি।

সচেতন মহলের আশঙ্কা, সমাপনী উৎসবের নামে এখনই র‌্যাগ ডে পালনে লাগাম না টানলে আগামীতে সন্তানেরা আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে। অপসংস্কৃতির ভয়াল থাবা যাতে বিস্তৃত না হয় সেজন্য সন্তানদের কাউন্সেলিং করতে অভিভাবক-শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: