• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’

প্রকাশিত: ১৩:১০, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৫:১৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ-এর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ‌‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’ এমন স্লোগানকে সামনে রেখে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই অনশন শুরু হয়। যা বেলা তিনটা পর্যন্ত চলে। 

প্রতীকী অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড রুশাদ ফরিদী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড মো. কামরুজ্জামান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসাহিদা সুলতানা রিতু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমুদ্দীন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের কাজী মারুফ, ইংরেজী বিভাগের তাসনীম সিরাজ মাহবুব, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ফাহরিনা দূর্রাত, ম্যানাজমেন্ট বিভাগের তাহমিনা খানম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলি শেহরীন ইসলাম, ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তসলিমা, রেহনুমা আহমেদ প্রমুখ।

এই সময় অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, আমরা শাবিপ্রবি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংগে সম্পূর্ণ একমত। কারণ একজন উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা সন্তানের মতো। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীদের দাবি অন্যায় নয়। তর্কের খাতিরে যদি বলাও হয় শিক্ষার্থীদের দাবি অন্যায় তাহলেও কোনো পিতা পুলিশ ডেকে সন্তানদের পিটাতে পারে না। যে উপাচার্যের মনোভাব এরকম তিনি উপাচার্যের পদে থাকার সব যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাই শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমাদের আজকের এই কর্মসূচি।

 

 

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যাদের সংগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক নেই, যারা শিক্ষার্থী বান্ধব না এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সচেতন না, এদের দ্বারাই আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব উপাচার্যগণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অনিয়ম, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দুঃশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। যার ফলে আজকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।

কর্মসূচীতে ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটাই আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মূল কারণ। এখানে আসলে তার একাডেমিক ও গবেষণা যোগ্যতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় তার মেরুদণ্ড কতো নরম। নরম মেরুদণ্ডের শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সঙ্গত কারণে তারা অমানবিক হোন, বিবেকহীন হোন। এই যে ক্ষমতার সংগে তাদের যে সখ্যতা তৈরি হয়, এর মধ্য দিয়ে উপাচার্য আর উপাচার্য থাকেন না। তারা সরকারের একটি বিস্তৃত অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

উল্লেখ্য, অসদাচরণের অভিযোগ এনে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত নয়টা থেকে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংগে বৈঠক হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন তাঁরা। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হলে এক পর্যায়ে পুলিশ এসে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আহত হন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আনন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ-এর পদত্যাগের দাবিতে ওই রাতেই আন্দোলনে নামেন। এরপর গত বুধবার ( ১৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে স্বেচ্ছায় ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। এদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র।  উপাচার্যের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা। 

এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ-এর বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ রবিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত পৌনে আটটার দিকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।  

বিভি/রিসি 

মন্তব্য করুন: