• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তুই ‘শিবির’ করিস বলেই কলেজ শিক্ষকের গালে এমপি’র চড়-থাপ্পড়

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২১ মে ২০২২

আপডেট: ০৮:১২, ২১ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
তুই ‘শিবির’ করিস বলেই কলেজ শিক্ষকের গালে এমপি’র চড়-থাপ্পড়

শিবির অভিযোগ তুলে কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঢুকে ২ সহকারী অধ্যাপককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান। এর আগে একইদিন বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছিত ২ শিক্ষক হলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে জেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলেজে প্রবেশ করেন। পরে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইনকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে কানে-মুখে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের কমন রুমে ঢুকে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় কলেজের নন-এমপিওভুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মজিদ মণ্ডল জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ঘটনার সময় কলেজের ২ কর্মচারী তাপস ও সবুজ সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনকে টানাহ্যাঁচড়া করেন। পরে বিকাল পর্যন্ত বহিরাগতরা দুদকের কিছু নথি হাতিয়ে নিতে কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি নিজ বিভাগ সংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু কাজ করছিলেন

ওই সময় কয়েকজন বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ‘তুই শিবির করিস’ বলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে তিনি কানে গুরুতর ব্যথা পান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান জানান, কলেজ থেকে সরকারি খাতা চুরির বিষয় নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশক্রমে একটি চুরির মামলা করা হয় আদালতে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। ওই মামলার সাক্ষী হলেন গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন। এ কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় আসামিরা। বহিরাগতদের ডেকে নিয়ে খাতা চুরি মামলার আসামি কারিগরি শাখার সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টনসহ অন্যরা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। 

অধ্যক্ষ আরও জানান, কলেজের কাজে সহকারী অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়ার পর নন-এমপিও ৬১ নম্বর সিরিয়ালধারী জুনিয়র প্রভাষক সুব্রত কুমার নন্দী ও খাতা চুরির মামলার আসামি সাবেক উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য বহিরাগত, কলেজের স্টাফ সবুজ ও পিয়ন তাপসের সহায়তায় ত্রাস সৃষ্টিসহ সহকারী অধ্যাপক মোশাররফকে লাঞ্ছিত করেন।

মারধরের শিকার অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হঠাৎ করে এসেই শিক্ষক রুমের সবাইকে বের করে দেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমাকে ‘তুই শিবির করিস’ বলে থাপ্পড় মারেন। পরপর তিনি ক্রমাগত পাঁচ-ছয়টি থাপ্পড় মারেন আমাকে।

বিষয়টি নিয়ে সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, দুদকের একটি ফাইল হাতিয়ে নিতে প্রভাষক সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল প্রথমে এসে আমাকে অপমান-অপদস্ত করেন ও মারধর উদ্যত হন। কিন্তু এ ধরনের একটি সরকারি ডকুমেন্ট নিতে হলে কালীগঞ্জ ইউএনও’র সম্মতি ছাড়া দেয়া যাবে না, তাদের জানিয়ে দেই। পরে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সুবিধা করতে না পেরে লাঞ্ছিত করার পর আমাকে ছেড়ে দেয় তারা।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজে ঝামেলা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে কলেজে পাঠানো হয়। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে কলেজের একটি ফাইল নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে করা লিখিত অভিযোগ এখনো তার হাতে পৌঁছায়নি বলেও নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার।

ঘটনার বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন: