• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সামিয়া রহমানের কাছে সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাওনা দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

আরিফ জাওয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১০ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৫:০৫, ১০ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
সামিয়া রহমানের কাছে সাড়ে ১১ লাখ টাকা পাওনা দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের কাছে পাওনা ১১ লাখ ৪১ হাজার ২১৬ টাকা দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১০ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন দাবি করা হয়েছে। টাকা পরিশোধ না করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে হেনস্তা করতেই এমন চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দাবি সামিয়া রহমানের।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের ২৬-০৪-২০২২ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, আপনার প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদসহ জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৬,৫৮,২১৬ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আপনার দেনা ১১,৪১,৬০১ টাকা পরিশোধ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। 

হিসাব পরিচালকের দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী—এই টাকার মধ্যে মূল বেতন বাবদ ৬ লাখ ৭ হাজার ৫৭৪ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, চিকিৎসা ভাতা বাবদ ১২ হাজার ৮০০ টাকা, গবেষণা ভাতা বাবদ ৪২ হাজার ৬৬৭ টাকা, অফ ক্যাম্পাস ভাতা বাবদ ৮ হাজার ৫৩৩ টাকা, বৈশাখী ভাতা ১৪ হাজার ২৪০ টাকা, উৎসব ভাতা ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ টাকা, মোবাইল ভাতা ৯ হাজার ৬০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামিয়া রহমান গণমাধ্যমে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো টাকা পায় না বরং অর্জিত ছুটিতে থাকায় আমিই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে টাকা পাই। মামলায় হেরে আমাকে টাকা বুঝিয়ে না দিতে এবং প্রতিশোধ নিতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর এই চিঠিতে ৩ আগস্টের স্বাক্ষর দেওয়া আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গতকাল আমাকে মেইল পাঠানো হয়েছে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে এটা একটা বানোয়াট চিঠি।

তিনি আরও বলেন, আমাকে হেনস্তা করার জন্য, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন তড়িঘড়ি করে এমন চিঠি বানিয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। ছুটির কাগজপত্র আমার কাছে আছে, ছুটিতে থাকলে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাবে। আমি আমার আইনজীবীর সাথে কথা বলছি। মামলা করবো, আর এটাতেও বিশ্ববিদ্যালয় হারবে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

গত বছরের ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সামিয়া রহমান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। ঢাবির সিনেটের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সামিয়া রহমানের আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশ হয়। এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গতবছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদাবনতি দিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: