• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আমার আমি এবং অপি করিম

শামীম শাহেদ

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আমার আমি এবং অপি করিম

‘আমার আমি’ যে এতটা জনপ্রিয় হবে সেটা আমি কিংবা অপি কেউই তখন ভাবতে পারি নাই। অপি মানে আমাদের প্রিয় অভিনেত্রী, আর্কিটেক্ট, উপস্থাপক সৈয়দা তুহিন আরা করিম এর কথা বলছি, যাকে আমরা অপি করিম নামে চিনি। অপি কিন্তু শুরুতে উপস্থাপনা করতেই রাজি হন নাই। এর কৃতিত্ব পুরোটাই অপি করিমের আম্মা শাহানারা করিম-এর। আন্টিকে অবশ্য আমরা বাবলি করিম নামেই বেশি চিনতাম। অপির বাবা সৈয়দ আব্দুল করিম একজন গল্পকার। পরবর্তি সময়ে যখন অপি প্রায়ই উপস্থাপনা ছেড়ে দিতে চাইত তখন আমার আমি যেন বন্ধ না করে সে জন্য আঙ্কেলেরও অনেক বড় ভূমিকা ছিল।


শুরু থেকেই বলি। একুশে টিভিতে একটা জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল, নাম-মিথসক্রিয়া। প্রযোজক ছিলেন গায়ক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। উপস্থাপনা করতেন কিসলু ভাই। ৯৮-৯৯ দিকের ঘটনা। তখন একুশে টেলিভিশন প্রচন্ড জনপ্রিয়। অনুষ্ঠানটি ছিল বিতর্ক ধরনের। একদিকে কিশোর-কিশোরিরা বসত, অন্যদিকে বসত তাদের অভিভাবকেরা। তারপর চলত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বিতর্ক। আমার খুব প্রিয় ছিল অনুষ্ঠানটি। আমি তখন প্রথম আলোতে কাজ করি, আর একুশে টিভিতে একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি, নাম কেনাকাটা। আমি আর অভিনেত্রী জয়া আহসান মিলে করতাম অনুষ্ঠানটি। আমাদের প্রযোজক ছিলেন ফাহমিদা মুন্নি। যিনি এখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। 

অপি করিমের পর মুনমুন উপস্থাপনা করেছেন ‘আমার আমি’র
একদিন বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে আমার ডাক আসল, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে হবে। কিশোর-কিশোরিদের নিয়ে অনুষ্ঠান। মিথসক্রিয়ার কাছাকাছি প্রায়। আমি রাজি হয়ে গেলাম। প্রযোজক বদিউজ্জামান আমাকে বললেন একটা নাম দিতে। আমি দিলাম- আমার কথা বলব আমি। এইসব দিন রাত্রির প্রযোজক মুস্তাফিজুর রহমান তখন ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক। তিনি হঠাৎ একদিন আমাকে বললেন, আমরা একটা নুতন টেলিভিশন করব, নাম হবে বাংলাভিশন। আমি চাই তুমি আমাদের সাথে যুক্ত থাকো। আমি তখন প্রথম আলোতে সাংবাদিকতা করি। কিন্তু আমার সব ভাবনাই তখন ছিল টেলিভিশন আর বিজ্ঞাপন নির্মান নিয়ে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। বাংলাভিশনের দ্বিতীয় নিয়োগপ্রাপ্ত হিসেবে আমি যুক্ত হয়ে গেলাম। শুরু হলো নতুন পথ, নতুন যাত্রা। 
বাজারে তখন ৪/৫টা টেলিভিশন চলছে। বিটিভি, ইটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা,্ এনটিভি, বৈশাখী টিভি, আরটিভি। আর একটা ছোট টেলিভিশন তখন ছিল, যার নাম ছিল-প্রাইম। এই অবস্থায় নুতন আরেকটা টেলিভিশন কেন লোকে দেখবে? তাই আমি ঠিক করলাম যা করার একেবারে ভিন্ন করতে হবে। অপি করিম তখন শুধুই অভিনয় করেন। আমরা দুজনই তখন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে কাজ করি। আতাউর রহমানের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকে অপি করেছিন ‘নন্দিনী’, আমি করেছিলাম ‘কিশোর’। এখন অবশ্য তিন কিশোরীর বাবা আমি। যা হোক, ঠিক করলাম অপি করিমকে উপস্থাপক বানাতে হবে। অনুষ্ঠানের ধরন হবে এমন যে, অপি অন্য তারকাদের ইন্টারভিউ করবে। খুবই ইন্টরেস্টিং হবে। প্রথম পর্বের গেস্ট ঠিক করা হলো মাহফুজ আহমেদ আর তারিনকে। তখন তাদের মধ্যে প্রেম ছিল বলে অভিযোগ আছে। অপিকে বলা মাত্রই প্রচন্ড আগ্রহের সাথে ‘না’ বলে দিল। ‘শামীম ভাই এইসব আমার কাছে আনবেন না, উপস্থাপনা-টুপস্থাপনা আমি করতে পারব না।’
আমি তো ছাড়বার পাত্র নই। আন্টির কাছে গিয়ে হাজির হলাম, আন্টি এই হল পরিকল্পনা। এই হল সেটের ডিজাইন। অপিকে রাজি করান। অনুষ্ঠানটা ভালো হবে। বলে রাখি, আমার আমি’র প্রথম যে সেটটি ছিল সেটা করেছিলেন সাজু খাদেম। টাইটেল মিউজিক করেছিলেন আলী আকবর রুপু। এখনো সেই মিউজিকটাই বাজে। আন্টি বললেন, চিন্তা কইর না বাবা, আমাকে দুই দিন সময় দাও, দেখি কী করা যায়। 
আন্টি কী করলেন জানি না, দুই দিন অপি আমাকে প্রশ্ন করলেন, নাম কী হবে? আমি বললাম ‘আমার আমি’। 
আবার প্রশ্ন করলেন অপি, এই নাম কেন রাখলেন?
৯৪-৯৫ এর দিকে আমি যখন ভোরের কাগজে কাজ করতাম তখন এর পাঁচ নাম্বার পাতায় একটা কলাম ছাপা হতো, নাম ছিল ‘আমার আমি’। বিভিন্ন সফল মানুষকে কয়েকটা প্রশ্ন করা হতো। সেই প্রশ্নের উত্তর থেকে সেই মানুষের একটা নুতন রূপ আমাদের সামনে উঠে আসত। সেই কাজটাই আমরা করব আমাদের ‘আমার আমি’তে। বিভিন্ন সফল মানুষের ভিতরের আমি’কে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করব আমরা। 

বাবা মা`র সঙ্গে অপি করিম
অপি রাজি হয়ে গেলেন। তার পরেরটুকু ইতিহাস। কত ঘটনা, কত গল্প, কত আলোচনা, সমালোচনা। ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত অপি করিমের পর, মুনমুন, নওশীন, মিথিলা, সারিকা অনেকেই উপস্থাপনা করেছেন ‘আমার আমি’র। কিন্তু তখন অপি করিম রাজি না হলে হয়তো ‘আমার আমি’ই হতো না। এখনো সেই টাইটেল মিউজিকটা বাজলে আমার শরীরে কেমন একটা যেন একটা অনুভুতি হয়! বলে বোঝাতে পারব না। অপিরও নিশ্চয়ই একই অনুভূতি হয়! আফটার অল, উপস্থাপনায় প্রথম প্রেম বলে কথা। দেখা হলে জিজ্ঞাসা করব অপিকে!

লেখক : সাবেক অনুষ্ঠান প্রধান, বাংলাভিশন
 

মন্তব্য করুন: