• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আমেরিকায় সবই চমৎকার, কেবল খেয়ে আনন্দ পাই না !

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ২৭ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
আমেরিকায় সবই চমৎকার, কেবল খেয়ে আনন্দ পাই না !

লস এঞ্জেলেসের ফুটপাতে ডাব বিক্রি

আমাদের বাড়ীতে অনেক নারকেল গাছ আছে। প্রচুর ডাব-নারকেল হতো আমাদের। ডাবের পানি আমি ভীষন পছন্দও করতাম। তবে, সবচে বেশী পছন্দ করতাম কচি ডাবের ভেতরের সাদা ’সফট‘ নারকেলটুকু। আমেরিকার উত্তরের দিকে নারকেল গাছ হয় না। এখানে সেঞ্চুরী ছাড়া দ্বিতীয় কোন গাছ হয়না বললেই চলে। আমরা অন্য কোন গাছ দেখি না, দেখতে পাই না। তবে দক্ষিনের স্টেইটগুলোতে (যেমন ফ্লোরিডা) অনেকটা বাংলাদেশের মতো সব ধরণের গাছই দেখা যায়; আম, কাঠাল, নারকেল ইত্যাদি সবই; কলা গাছও। 

কিন্তু আমারা নিউ ইয়র্কাররা সেসবের কিছুই চোখে দেখি না। সাউথ থেকে অনেক ফলমুল এখানে আসে। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে অবস্থিত ’মান্নান গ্রোসারী’ থেকে বেশ কয়েকবার লেমিনেটিং করা ’ছিলা কচি ডাব’ কিনেছি বটে- কিন্তু প্রতিবারই ঠকেছি। নিউ ইয়র্কের বাঙালী গ্রোসারী মালিকগুলো বাংলাদেশী ‘চেতনা’ ত্যাগ করতে পারেনি। এরা সবাই বড় মাপের চোরা-মনোবৃত্তি-সম্পন্ন। নির্দিধায় এরা পচা জিনিস বিক্রি করে। 

যদিও স্থানীয় মালিকদের ‘আমেরিকান গ্রোসরী’গুলোতে কখনওই কোন পচাঁ সবজী বা ফল বিক্রি করতে দেখা যায় না। কদাচিৎ হলেও তারা অভিযোগ করলে সপূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশী মালিকরা কখনওই টাকা ফেরত দেয় না। এদের আচরণও অনেকটা বাংলাদেশীদের মতোই। এরা অধিকাংশই আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে গ্রীনকার্ড পেয়ে আমেরিকায় এসেছে, কিছু টাকা পয়সা জোগাড় করে গ্রোসারী ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে। আমি বাধ্য হয়ে মাছ-সবজী ও হালাল মাংসের জন্য ওদের কাছে যাই। বাদবাকী সব গ্রোসারী পন্য ‘আমেরিকান গ্রোসারী’ থেকেই কেনার চেস্টা করি। এখানকার ’ফাতেমা গ্রোসারী’ নামের এক গ্রোসরী থেকে একটি কাঠাল কিনেছিলাম সম্ভবত ৬৫ ডলার দিয়ে - তার একটি ‘রোয়া’ও খেতে পারিনি, পচাঁ বের হয়েছিলো। কিন্তু এরা কোন অভিযোগ গ্রহন করে না। 

ইওরোপে বাংলাদেশ থেকে ফল-মুল আমদানী হলেও আমেরিকায় কখনওই আসে না, আটলান্টিক পাড়ি দেয়া মনে হয় বারণ আছে! এমনকি আমেরিকায় (ব্যক্তিগত পর্যায়ে) লাগেজে করে কোন ‘সবুজ’ ফল বা সবজীও আনা যায় না। কেউ আনলে ৩০০ ডলার জরিমানা করে ’ওসব’ গার্বেজ করে দেয় হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা।
বছর কয়েক আগে একবার লস এঞ্জেলেসের ফুটপাতে এক বৃদ্ধ হিস্পানিককে ডাব বিক্রি করতে দেখেছিলাম; দামও খুব কম ছিলো যদ্দুর মনে পরে মাত্র ৩ ডলার করে। তার কাছ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেয়েছিলাম দুটো ডাব।
আমাদের বাড়ী থেকে পাইকাররা নারকলে নিতো, প্রতিটি নারকলে ৫টাকা করে নিতে দেখতাম। সে প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে। 
ছবিতে নিউ ইয়র্কের ফুটপাতে ডাব বিক্রি হচ্ছে ৫.৯৯ ডলার করে। বোঝাই যাচ্ছে তরতজা ডাব এগুলো। ৩৫/ ৩৬ বছর আগের আরও একটি স্মৃতি সামনে চলে আসলো। 
সেবার প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পরেছিলো। আমাদের নদীর ঘাটে প্রচুর ইলিশ ভর্তি ট্রলার ভিড়ে থাকতো এবং বাজারে বড় সাইজের ইলিশগুলো মাত্র ৫ টাকা করে বিক্রি হতো। 
তখন গ্রামের সকলেই প্রচুর ইলিশ মাছ খেতো; আমাদের বাড়ীতেও প্রায় প্রতিদিনই ইলিশ মাছ কিনে আনা হতো। 
অথচ তখন আমি ইলিশ মাছ খেতে পারতাম না, কেমন যেন একটা বিরক্তিকর গন্ধ আসতো মাছ থেকে। অথচ এখন সেই ইলিশ মাছই আমার অত্যন্ত প্রিয় মাছ যদিও এখানে প্রতি পাউন্ডের মুল্য ১৫ ডলার। একটা আস্ত মাছের দাম হয়ে যায় কমবেশী ৫০ ডলার। এসব মাছ পদ্মা বা চাঁদপুরের বলে বিক্রি হয় - যদিও সব মাছই আসে আসলে বার্মা থেকে (আমদানীকারকদের তথ্য অনুযায়ী; যদিও সিল মারা থাকে পদ্মার ইলিশ)। 

তারপরও দেশী মাছ বলতে এখন শুধুমাত্র ইলিশ মাছটাই এখানে এখন খেতে পারি। রুই-কাতল বা পাংগাস-মৃগেল মাছ আমি পছন্দ করি না; খাইও না। বার্মার কিছু চিংড়ী মাছ পাওয়া যায় - যা দেশী মাছের মতোই অনেকটা। 
আগে পাকিস্তান থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইটে বরফ দেয়া আইড়-বোয়াল এমনকি গুলসা মাছও আসতো (বিক্রি হতো বাংলাদেশী নদীর মাছ বলে)। কিন্তু কোভিডের সময় হঠাৎই ইউএস গভর্ণমেন্ট ‘দাড়িওয়ালা যাবতীয় মাছ” আমদানী নিষিদ্ধ করেছে। বাদ পরে গেছে আইড়, বোয়াল, ট্যাংরা বা গুলসার মতো অতি সুস্বাধু মাছগুলো। 
আমার প্রিয় মাছগুলো খেতে পারছি না বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো।  আমেরিকায় সবকিছুই সুন্দর, চমৎকার। শুধুমাত্র ‘খাবার’গুলোতেই কোন স্বাদ নেই, খেয়ে আনন্দ পাই না। 
ভালো, টাটকা, সতেজ মাছ, সবজী, কাগুজি লেবু ও অন্যান্য দেশী ফলের জন্যই হয়তো একদিন দেশে ফিরে আসবো।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী

মন্তব্য করুন: