• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কের রুপান্তর, সেকাল একাল

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
সম্পর্কের রুপান্তর, সেকাল একাল

এখনকার ছেলে মেয়েরা হুটহাট রিলেশনে জাড়ায়না। বিয়ে করতেও সময় নেয়। কখনও কখনও পাঁচ সাত বছর লাগিয়ে দেয় পরস্পরকে জানতে। ক্যারিয়ার, মানুষটা কেমন এটা বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠে। বিয়ের পর সন্তান নিতেও অনেক চিন্তা ভাবনা করে। উপযুক্ত সময় খোঁজে। অনেকে আবার পছন্দমতো সঙ্গী না পেয়ে বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ভীতিও আছে। পাশ্চাত্য কালচারে অবশ্য লিভ টুগেদার করার বিধান আছে। একসাথে তিরিশ বছর থাকার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসে। আমাদের সমাজেও এখন বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া ডালভাত। না পোষালে নাই। গুড বাই বলতে দ্বিধা করে না। 


কিন্তু আমাদের সময় এমনটা ছিল না। আমার সাথে জেসমিনের কোনো দিক থেকেই কোনো মিল ছিল না। আমাদের পরিচয় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমি এসেছি মফস্বল থেকে, হলে থাকি, আর্থিক দুর্গতি নিদারুণ, দেখতে ইম্প্রেসিভ না। জেসমিন আমার উল্টো। তাও আমাদের সম্পর্ক বা বিয়ে হতে আটাকয়নি। সন্তানও নিয়েছি দ্রুত। বন্ধুরা মজা করে বলেছিল কিউএসএস সার্ভিস। আমার প্রথম সন্তান জন্মের দুই বছর দুই মাস পর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছিল। আমার বস  বলেছিলেন ঠু আর্লি জসিম! 


তখনও আমি স্ট্রাগল করছি। কোনো প্লান ছাড়াই সব ঘটেছে। আমি কখনও প্লান করে কিছু করিনি। পূর্বাপর পরিণতি ভাবিনি। বেশি ভাবলে জেসমিনের সাথে বিয়েই হতো না। শুরু থেকেই জেসমিন আমার মতো এলেবেলে মানুষকে মেনে নিয়েছিল। সম্পর্কের ৩৫ বছর পার হয়েছে। আমাদেরও ঝগড়া হয়, কথা বন্ধ থাকে কিন্তু আমরা পরস্পরের উপর এতোটাই নির্ভরশীল যে ঝগড়া হলে দুজনেরই লস। এই যে আমি ৪০টির বেশি বই লিখেছি সেটা সম্ভব হয়েছে জেসমিন ছিল বলে। যদিও জেসমিন আমার কোনো বই পড়েনি। আমি কি বিষয় নিয়ে লিখি তাও জানে না। পরিচয়ের আগে আমার নামও শোনেনি কখনও। কোথায় বাড়ি, অবস্থা কি এসবও জানত না। 
আমাদের সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। মানুষটাই মুখ্য ছিল। অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়ার মতো অবস্থা। রুপে মুগ্ধ বা প্রেমে অন্ধ টাইপ। কিন্তু এই প্রজন্ম অনেক বেশি ক্যালকুলেটিভ। টু দ্যা পয়েন্ট। ঘরেও যার যার যার কাজ ভাগ করা, আলাদা ব্যাংক একাউন্ট। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এমন না। আমাদের জয়েন্ট একাউন্ট। কিচেন, লন্ড্রি আর বাজারের দ্বায়িত্ব তাঁর। আমাদের সবকিছুই একটু ওল্ড ফ্যাশন। আমরা নিজেদের নিয়েই বুঁদ হয়ে থাকি না, অন্যদের কথাও ভাবি। তবে শেষ কথা হচ্ছে সব সম্পর্কই টিকে থাকে ভালবাসার উপর, আস্থার উপর, নির্ভরতার উপর সেটা হোক আগের বা এখনকার। আমার সন্তানদের দেখে সেটা আমি টের পাই। ভালবাসা সবসময় অমলিন। ওটা শেষ সব শেষ!
টরন্টো ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

মন্তব্য করুন: