• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পাখির জন্য ভালোবাসা

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

প্রকাশিত: ১৮:০২, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
পাখির জন্য ভালোবাসা

আমার বাসার বারান্দায় প্রচুর পাখি আসে খাবার খেতে। পাখিদের ২-তিন বেলা খাবার দিই; আমেরিকায় যারা বসবাস করেন তাদের অনেকেই এই মহৎ কাজটি করে থাকেন। এদের মধ্যে থাকে ঘুঘু পাখি, বাবুই পাখি, চড়ুই পাখি, এক ঝাঁক জালালী কবুতর এবং আরও কয়েকটা নাম না জানা পাখি। 


পাখিরা বন্য। বন্যরা সামাজিকতা বুঝে না; বিধায় এরা কখনওই মানুষের সংগে মিশে না বা বন্ধুত্ব করতে আসে না। এরা আসে স্রেফ খাবার খেতে। খুব ভোরে এরা আসে, খাবার খায়; এবং ক্ষুধা লাগলেই এরা এসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করে। খাবার শেষ হলে চলে যায়। এদের সংগে আমি বহুবার বন্ধুত্ব করতে চেস্টা করেছি। 
কিন্তু এরা তা চায় না। আমি খাবার হাতে সামনে গেলেও এরা উড়ে চলে যায়। আমি বারান্দা থেকে না যাওয়া পর্যন্ত এরা আসে না। 
অনেকভাবেই এদের কাছে ডেকেছি কিন্তু এরা আসবে না। আসে না। আমি ওদের স্বভাব বুঝে ফেলেছি। তাই ওদের আর ঘাটাই না; কাছেও ডাকি না। শুধুমাত্র খাবার দিয়েই আনন্দ পাই। 
ওরা খাবারের জন্য ‘আমার বারান্দা’তেই এসে অপেক্ষায় বসে আছে - দেখতে ভালো লাগে। এটুকুকেই আমার কাছে পাখিদের সংগে বন্ধুত্ব মনে হয়। 
কিন্তু একটা বিষয় আমাকে বেশ অবাক করে। 
এবং আহত করে। আমি হকচকিয়ে উঠি। 
পাখিরা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পরে তখন এদের পালকগুলো এলোমেলো-উস্কখুস্ক হয়ে উঠে, পালকগুলো ফুলে উঠে। এবং এদের খুবই দুর্বল মনে হয় তখন। 
এবং অসুস্থ হলেই পাখিরা আমার বারান্দায় চলে আসে।
এবং সেই সংগে তাদের স্বভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। 
অসুস্থ পাখিটি আমার সান্নিধ্য পেতে চায় তখন। 
আমি বুঝতে পারি সে ঘরের ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে। আমি গেইট খুলে দিলে এরা ভেতরে চলে আসে। 
খাবার দিলেও তখন এরা আর খাবার খায় না। 
কেমন করে অসহায় হয়ে বসে থাকে চুপটি করে। 
হাত দিয়ে পাখিটাতে ধরতে গেলেও সরে যায় না (হয়তো শক্তি থাকে না ওদের ছোট্ট শরীরটুকুতে)।
পাখিদের অন্তিম সময়টুকু আমি উপলদ্ধি করি। 
এক জায়গাতেই বসে বসে ঝিমায়। 
একসময় আমার বাসায় মারা যায় ছোট্ট অসহায় পাখিটি। 
বন্ধুর মৃত্যুতে অন্য পাখিদের কান্না করতে বা শোক প্রকাশ করতে দেখিনি কখনও। 
কাকেরা তাদের বন্ধুর মৃত্যুতে পুরো মহাল্লা চড়িয়ে বেড়ায় জানি কিন্তু এসব পাখিরা তা করে না। একটা দুটা পাখি মারা গেলে অন্যদের যেন কিছুই হয় না। 
ওরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন খাবারের জন্য আসে। 
আজ সারাদিন বৃস্টি ছিলো। 
দুপুরের দিকে একটা কবুতরকে দেখলাম অসুস্থ হয়ে বসে  আছে।
বাইরে প্রচন্ড শীত। আমি বুঝে গেছি মোটা লোমের জন্য ওদের হয়তো শীত উপলদ্ধ হয় না তেমন একটা। গেট খুলে ভেতরে ঢুকাতে চেস্টা করলাম। কিন্তু পাখিটা কাছে আসলো না, একটু দূরে সরে গেলো। কিছু খাবারও খেলো। 
ভাবলাম, অতটা অসুস্থ নয় হয়তো, খাবার যেহেতু খাচ্ছে তাহলে সুস্থ হয়ে উড়ে চলে যাবে। 
বিকেলে আর দেখিনি কবুতরটিকে। 
ওরা যেহেতু খুব ভোরে আসে তাই মধ্য রাতেই ওদের খাবার দিয়ে রাখি। 
এখন খাবার দিতে গিয়ে দেখলাম কবুতরটির মৃত দেহটি বৃস্টিতে ভিজছে।  দৃশ্যটি ভীষন কস্ট দিচ্ছে।
পাখিদের জন্যও বুঝি অনেক মায়া জন্মে যায় মানুষদের মনে।
 

মন্তব্য করুন: