আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!
সংগৃহীত ছবি
আমাদের অনেকগুলো খেজুর গাছ ছিলো; আর ছিলো নারিকেল গাছ। শীতের শুরুতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম কবে ‘গাছি’ এসে খেজুরের গাছগুলো রস পাবার জন্য প্রস্তুত করবে। গাছ কাটা থেকে শুরু করে, নিয়ম করে রস নেয়া প্রতিটি পর্যায় আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করতাম। শীতের ভোরে গাছি যখন গাছ থেকে রস নামাতো আমি সেই শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে দৌড়ে যেতাম রস নিয়ে আসতে। গাছি একটা একটা করে গাছ থেকে রস নামিয়ে এক সংগে সব রস মিলিয়ে তারপর সবটুকু রসকে ২ ভাগ করে এক ভাগ আমাকে দিতো; অন্য ভাগ নিয়ে যেতো। সে কি যে এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
‘গাছি’ ৩ দিন পরপর আবার টানা ৩ দিন আমাদের খেজুর গাছ কাটতে আসতো।
রস দেবার পর আমাদের রসের হাড়িগুলোও আমাকে দিয়ে যেত ধুয়ে রাখার জন্য - আমি পরম আনন্দে সেই রসের হাড়িগুলো ধূয়ে রাখতাম। বিকেলে গাছি এসে সেই রসের হাড়িগুলো গাছে লাগিয়ে যেতো - আমি তার প্রতিটি কাজ দারুণ এক আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করতাম। সে যে কি আনন্দ ওসব কাজে তা বোঝানো সম্ভব নয়।
আর প্রতিদিনই আমি সেই খুব ভোরের নামানো রস বাসায় নিয়ে এসে প্রথমে মুড়ি দিয়ে কয়েক গ্লাস খেয়ে নিতাম। এছাড়াও সকালের প্রতিদিনই মায়ের হাতের রসের চা ছিল এক অসাধারণ খাবার। তৃপ্তি নিয়ে খেতাম সেই চা।
রস দিয়ে মা মাঝে মধ্যেই তৈরী করতেন ‘ভেজানো পিঠা’ - যা বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। খাবার চেয়ে বানানো দেখতেই বেশী আনন্দ পেতাম।
মাঝে মধ্যেই আমার দুই ভাগিনা ব্লাক এন্ড হোয়াইট (মিঠু-টিটু)-কে সংগে নিয়ে শীতের বিকেলে চলে যেতাম একটু দূরের ‘পালামগঞ্জ বাজারে’ - সেখানে রসের চা বিক্রি হতো। সে যে কি মজা করে খেতাম সেই বৈকালিক রসের চা।
আহা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!
সত্যিই, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!
মন্তব্য করুন: