যে কারণে তৈরি হয়েছিলো অপরূপ রোজ গার্ডেন
সংগৃহীত ছবি
ছবির এই অনিন্দ সুন্দর প্রত্নতাত্বিক বাড়িটির গায়ে বাড়ির নাম লিখা আছে রশিদ মঞ্জিল। কিন্তু এলাকাবাসী এই বাড়িটি চেনে হুমায়ুন সাহেবের (খান বাহাদুর আব্দুর রশিদের পুত্র) বাড়ি হিসেবে। আর আমরা যারা দূর থেকে এই বাড়িটিকে দেখতে যাই, তারা খুজি রোজ গার্ডেনকে । ১৯৩১ সনে তৎকালীন ঢাকার ধনাঢ্য ব্যাংকার, ইট-সুরকি উৎপাদন এবং চুন, কাঠ, কয়লা ইত্যাদির ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস রোজ গার্ডেন বাড়িটি ঢাকার টিকাটুলিতে তৈরি করেন। এই ভবনটি মুলত একটি ব্যক্তিগত জলসা বা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা হয়।
যথেষ্ট অর্থ ও প্রতিপত্তির মালিক হবার পরেও জমিদার ঋষিকেশ দাস শুধুমাত্র নিম্নবর্ণের মানুষ হবার কারনে ঢাকার বনেদি বিত্তবানদের নিয়মিত জলসার আসর বলধা গার্ডেনে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলেন। সেখানে নিম্ন গোত্রের মানুষ হবার কারণে একবার তিনি অপমানিতও হন। মনঃক্ষুণ্ণ ঋষিকেশ দাস টিকাটুলিতে এই বিনোদন ভবন তৈরি করেন। ভবনের আঙিনায় নানা রঙের দুর্লভ গোলাপের সমাহার ছিল বলে এই বাড়ির নাম হয়ে যায় রোজ গার্ডেন। কিন্তু বেহিসেবি ঋষিকেশ হঠাৎ দেউলিয়া হয়ে যান এবং ১৯৩৬ সনে খান বাহাদুর আব্দুর রশিদের নিকট বাড়িটি বিক্রি করে দেন। বাড়ির নাম পাল্টে হয়ে যায় রশিদ মঞ্জিল। বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সনে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য রশিদ সাহেবের উত্তরাধিকারীদের নিকট হতে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে ক্রয় করে। এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
বাড়িটি এক কথায় অপরূপ সুন্দর। বাইশ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত বাড়িটির আঙিনায় এখন আর গোলাপের সমারোহ নেই। তবে সুসজ্জিত লনের মাঝে অনেকগুলো পাথরের মূর্তি ও ছোট্ট একটি ফোয়ারা শোভা পাচ্ছে। ভবনের সামনে একটি দীঘি বাড়ির সৌন্দর্যে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। উল্লেখ্য যে ১৯৪৯ সনের ২৩শে জুন এই বাড়িতেই একটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। তখন অবশ্য দলটির নাম ছিল "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ"।
মন্তব্য করুন: