• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিউটি বোডিং-এ আড্ডাবাজদের বলা হতো

খন্দকার দেলোয়ার জালালী

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৯ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৬:৩০, ২ এপ্রিল ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বিউটি বোডিং-এ আড্ডাবাজদের বলা হতো

বিউটি বোডিং। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যময় এক ইতিহাসের স্বাক্ষী। একই উঠোনে গুনীদের এত বিরাট আড্ডার ইতিহাস সম্ভবত আর কোথাও নেই। এখনো সোনালী সেই দিনগুলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে বিউটি বোডিং। এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষের পদভারে মুখর হয়ে ইতিহাসের জ্বাজল্যমান স্বাক্ষী। 


বিউটি বোডিং মানেই ধ্রুপদী আড্ডার অঙ্গন। জন্ম থেকেই যেখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি আর জ্ঞান চর্চায় জম্পেশ আড্ডা জমেছে। এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এখানে যারা আড্ডার আসরে আসতেন এদের মধ্যে কবি শামসুর রাহমান, রণেশ দাশগুপ্ত, ফজলে লোহানী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ব্রজেন দাস, হামিদুর রহমান, বিপ্লব দাশ, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, আহমেদ ছফা, হায়াৎ মাহমুদ, সত্য সাহা, এনায়েত উল্লাহ খান, আল মাহমুদ, আল মুজাহিদী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, ড. মুনতাসীর মামুন, ফতেহ লোহানী, জহির রায়হান, খান আতা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, নির্মল সেন, ফয়েজ আহমদ, গোলাম মুস্তাফা, খালেদ চৌধুরী, সমর দাস, ফজল শাহাবুদ্দিন, সন্তোষ গুপ্ত, আনিসুজ্জামান, নির্মলেন্দু গুণ, বেলাল চৌধুরী, শহীদ কাদরী, ইমরুল চৌধুরী, সাদেক খান, ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, শফিক রেহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আসাদ চৌধুরী, ভাষাসৈনিক ও পুস্তক প্রকাশক মোহাম্মদ সুলতান, সিকদার আমিনুর হক, জুয়েল আইচ প্রমুখ। বিউটি বোডিং-এ আড্ডাবাজদের বলা হতো "বিউটিয়ান"।

পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ১, শ্রীশদাস লেনে বিউটি বোর্ডিং বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে সেখানে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস। কবি শামসুর রহমানের প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল এ পত্রিকায়। দেশভাগের সময় পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৯ সালে দুই ভাই প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী মোহন সাহা গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং। বাড়িটি ১১ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিউটি বোর্ডিংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহাসহ ১৭ জন। পরবর্তীতে প্রহ্লাদ চন্দ্রের পরিবার ভারতে চলে যান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্রের স্ত্রী শ্রীমতী প্রতিভা সাহা দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহাকে নিয়ে বিউটি বোর্ডিং আবার চালু করেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের মুখর আড্ডা আগের মতো না থাকলেও খাবার ঘরে এখনো খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের ভোজনরসিকরা এখানে ছুটে আসেন। আর নিয়মিত খান পুরোনো ঢাকার বইয়ের মার্কেটের নানা শ্রেণির মানুষ। 

ছোট খাটো আলাপ আর চা-কফির আড্ডায় এখনো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বিউটি বোডিং। দুপুর আর রাতের খাবারের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এখনো। বেড়াতে এসে সবাই ছবি তোলেন স্মৃতির পাতা সম্বৃদ্ধ করতে। নতুন প্রজন্মের সামনে ঐতিহ্য তুলে ধরতে আপনিও পরিবারসহ আসতে পারেন বিউটি বোডিং দেখতে।
 

মন্তব্য করুন: