• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার সৈকত এবং মেরিন ড্রাইভে নারিকেল গাছ লাগান

আ.ন.ম. মোয়াজ্জেম হোসেন

প্রকাশিত: ১৬:১০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
কক্সবাজার সৈকত এবং মেরিন ড্রাইভে নারিকেল গাছ লাগান

ঝাউ গাছে ফুল হয় না, ফল হয় না, পাখি বসে না, শেকড় মাটির গভীরে পৌঁছাতে পারে না বলে সামান্য ঢেউয়ের আঘাতে সাগরে তলিয়ে যায়। অন্যদিকে নারিকেল গাছ লবণাক্ত পরিবেশের উপযোগী বলে সকল প্রতিকূল পরিবেশ নিজেকে ও বেলাভূমিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম, কারণ তার শেকড় ৫০-১০০ মিটার মাটির গভীরে প্রবেশ করে মাটি ধরে রাখে। সারা বছর ফলন হয়, ছায়া দানের পাশাপাশি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে, ময়লা আবর্জনা বা পাতা ঝরে পড়ে আবর্জনা সৃষ্টি করে না। পর্যটকদের চাহিদার শীর্ষে ডাবের অবস্থান, নারকেল আমাদের সুস্বাদু প্রতিটি খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার হয়। নারকেল থেকে চাইলেই আমরা নিজেদের চাহিদার প্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল সংগ্রহ করতে পারি, নির্ভরতা কাটাতে পারি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম তৈল থেকে। সৃষ্টি হতে পারে হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান। তাই আমার গত এক দশক ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঝাউ গাছের পরিবর্তে নারিকেল গাছ লাগানোর প্রস্তাব করে আসছি।

গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, তা এখন সম্প্রসারিত হয়ে কবিতা চত্বর ও শৈবাল পয়েন্ট ধ্বংস করে লাবনী পয়েন্টে এসে ঠেকেছে। যার কারণে হুমকির মুখে হোটেল মোটেল মার্কেট। অথচ আজ এসব পয়েন্টে যদি নারিকেল গাছ থাকতো তবে কখনো এভাবে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন স্থাপনা ও অংশ ভেঙে সাগরে তলিয়ে যেতো না। গত দশ বছর আগে থেকে তাই বার বার স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সতর্ক করেছিলাম যেন সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন অপরিকল্পিত স্থাপনা ও সমুদ্র সৈকতের কোনো অংশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন না করা হয়।
 
কে শুনে কার কথা! প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় সব কিছু। ভয় ও শঙ্কায় কেউ রা শব্দ করেনি। সেদিন চুপ থাকার ফল এখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে, গায়ের জোরে পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে ঢাকায় বসে প্রকল্প তৈরি করে প্রকল্প চাপিয়ে দিয়ে কাজ করা হয়েছে প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানকে ঘিরে বার বার। আর আজ হয়ত তার মূল্য দিতে হবে কক্সবাজারের মানুষকে।

প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কক্সবাজার ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন অংশে লাগানো হয় লক্ষ লক্ষ ঝাউ গাছ, যার বেশিরভাগ উকি দিয়ে উঠে আসলেও সাগরের প্রবল স্রোতের কারণে তলিয়ে যায়। হারিয়ে যায় শেকড় সমেত সর্বোচ্চ বড় গাছের অস্তিত্বসহ। তবুও আমরা প্রতি বছর সেই গাছ গুলো লাগাই বারে বারে।

পৃথিবীর প্রায় সব সমুদ্র সৈকতে নারিকেল গাছ দেখা যায়। যা শিকড় দিয়ে ৫০ থেকে ১৫০ মিটার গভীর পর্যন্ত মাটি ধরে রাখে ও মাটির ক্ষয় রোধ করে।

তাছাড়া ডাব পুষ্টিকর পানীয় হিসেবে মানবদেহের ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ উপাদানের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুস্বাদু পানীয় হিসেবে তৃষ্ণা মেটায় এবং সমুদ্র সৈকতে উৎপাদিত নারিকেল থেকে দেশের ভোজ্য তেলের বিপুল চাহিদার যোগান সম্ভব হবে, এতে অর্থনৈতিকভাবেও সরকার ও বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের মানুষ উপকৃত হবে।

তাছাড়া নারিকেল গাছ লবণাক্ত আবহাওয়ার উপযোগী, যা সারা বছর ফল দেয় ও বর্জ্য বা ময়লা সৃষ্টি করে কম ও ডাল-পালা উপরে থাকায় ঝোপ ঝাড়ের পরিমাণ একদম থাকে না বললেই চলে। আর এতে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা কম।

অথচ সেই নারকেল গাছের বদলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতি বছর হাজার হাজার ঝাউ গাছ রোপণ করা হয়। যার ফুল বা ফল হয় না, যে গাছে পাখি বসে না ও কোনো কাজে লাগেনা এবং যার অর্থকরী কোনো সুফল আমরা পাই না।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ এবং  স্বাস্থ্যকর স্থান কক্সবাজার। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে আসে। আর সেই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের জন্য রয়েছে আধুনিক যুগোপযোগী মানসম্মত শত শত হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজসহ ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে বিভিন্ন পশরা।

মানুষ এখন প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে তারা যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভাল লাগার সময়টুকু প্রিয় মানুষের সংগে শেয়ার করতে চায়। কিন্তু কক্সবাজারের শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রতিযোগিতামূলকভাবে গড়ে উঠেছে একের পর এক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ, যেখানে নেই প্রকৃতির চোয়া, নেই নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ, নেই সুস্থ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বিনোদনের কোনো আয়োজন। তাই যুগের প্রয়োজনীয়তায় মানুষ এখন খুঁজে ফিরে ইকো-ট্যুরিজম, চায় পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন পরিকল্পনা। আর তার জন্য সবচেয়ে প্রথমে প্রয়োজন ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলার মত পরিবেশ-বান্ধব মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের আবহ।

তবেই ধরী ধীরে গড়ে উঠতে পারে মনোরম সুন্দর আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশ-সম্মত হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ। তাই এখনই তারই উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকে সাজাতে হবে আন্তর্জাতিক আবেদন ও সৌন্দর্যের আদলে। তাই সেই মান্ধাতা চিন্তা ও পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসার প্রথম সোপান হল সমুদ্র সৈকতের সর্বত্র নারিকেল গাছ রোপণের মাধ্যমে কোকোনাট বিচ হিসেবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে গড়ে তোলা।

গত এক যুগ ধরে Save The Nature of Bangladesh সমুদ্র সৈকতে ঝাউ গাছের পরিবর্তে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে নারিকেল গাছ লাগানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বন বিভাগ এবং কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নেতৃবৃন্দকে।

আশা রাখছি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বিষয়টি সরেজমিন পরির্দশনপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন: