• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাতির প্রতি নির্মমতা

মোল্লা রেজাউল করিম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ২০ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ২০:৩২, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
হাতির প্রতি নির্মমতা

হাতির মৃত্যু দুঃখজনক। গত ৮ নভেম্বর তারিখে শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার বালিজুরী রেঞ্জে একটি ২৫-৩০ বছর বয়সী পুরুষ হাতি বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে জড়িয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ১। মো. আমির উদ্দিন ২। মো. সমজ উদ্দিন ৩। মো. আশরাফুল ৪। মো. শাহজালালকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

আবারও হাতি মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পানি হাতা এলাকায়। গত ১৯ নভেম্বর রাতে একটি স্ত্রী হাতির ৪-৫ বছর বয়সী বাচ্চা মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিগত কয়েক দিনে আরো চারটি হাতি মৃত্যুবরণ করায় সাম্প্রতিক সময়ে হাতি মৃত্যুর সংখ্যা ৬-এ দাঁড়ালো।

গতকালের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। সংগে ছিলেন বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির উদ্দিন আকন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল আমিন, এসিএফ মো. আবু ইউসুফ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা, রেঞ্জ অফিসারগন সহ ERT (Elephant Response Team) এর সদস্যরা। 

প্রতিবছর ধান পাকার মৌসুমে শেরপুর ও জামালপুর জেলার গারোপাহাড় সংলগ্ন বনাঞ্চলে বেড়ে যায় হাতির আনাগোনা। পাহাড়ে খাদ্যের সংকটে হাতিরা নেমে আসে লোকালয়ে ও ধানের জমিতে। শুরু হয় মানুষ হাতির আন্তঃসংঘাত। 

ধান, কাঁঠাল, লবণ ও সবজি জাতীয় খাবার হাতির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কাঁঠাল খাওয়ার লোভে, ধান ও লবণের আকর্ষণে হাতি চলে আসে লোকালয়ে। সম্প্রতি হাতির লোকালয়ে আসার প্রতি মানুষের অসহিষ্ণুতা ও নৃশংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে আশংকাজনক মাত্রায়। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় এ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

হাতির মৃত্যু রোধে বনবিভাগ সর্বদা তৎপর। সীমিত জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা অব্যহত রেখেছে বনবিভাগ। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। হাতি অধ্যুষিত জনপদের কমিউনিটি পিপলকে সংগে নিয়ে হাতি রক্ষার কাজ করতে ২০১৬ সাল থেকে দেশে গড়ে তোলা হয়েছে Elephant Response Team (ERT)। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০টি ERT গঠন করা হয়েছে, যারা বনবিভাগের সংগে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করে হাতি ও মানুষের জান-মাল রক্ষায় অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে।

হাতিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রনয়ণ করা হয়েছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২। এই আইনে হাতি হত্যার কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। বনবিভাগের পামাপাশি পুলিশ সহ সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

প্রনয়ণ করা হয়েছে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ ক্ষতিগ্রস্তের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপুরণ প্রদানের বিধিমালা। 
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অনবদ্য ভূমিকার জন্য দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন। 
দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতি বান্ধব ও পরিবেশমনষ্ক করতে গড়ে তোলা হয়েছে Bangladesh Biodiversity Conservation Federation (BBCF)।

আধুনিক শিক্ষিত হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এখন BBCF এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কাজে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছে। 

জনবহুল এদেশে অতি ক্ষুদ্রতম ভূখণ্ডে পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘসহ বৃহদাকার বন্যপ্রাণী। খাদ্য, বিচরণ ক্ষেত্র, নিরাপদ আবসের সংকটে নিত্য মানুষ আর বন্যপ্রাণী সংঘাত মুখোমুখি রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এর ব্যবস্থাপনা অতি দুরূহ। সেই দুঃসাধ্য কাজটি অন্তহীন আন্তরিকতায় করে যাচ্ছে বনবিভাগ। 

তবুও অন্ধকারের আবর্তে নিমজ্জিত কিছু পৈশাচিক মানুষের নির্মমতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের বন, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও ইকোসিস্টেম তথা মূল্যবান সম্পদ।

ভুল তথ্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র, যা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে। বিগত দু’দিনের শেরপুরের হাতি মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে চক্রটি। প্রথমটি পুরুষ হাতি হলেও ছড়ানো হয়েছে স্ত্রী হাতি, তার ছোট বাচ্চাটি নাকি মায়ের শোকে কাতর।
গতকালের মৃত্যু হাতিটি মেয়ে বাচ্চা। কিন্তু প্রচার করা হয়েছে পুরুষ। কারো বহু কাহিনী। 

হাতিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বনবিভাগ। পাশে চাই আপনাদের সকলকে, আপনাকে।

বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা রেজাউল করিম-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিভি/এসডি

মন্তব্য করুন: