বিষণ্ণতায় ভুগছেন কি-না যেভাবে বুঝবেন
প্রত্যেক মানুষ কখনও না কখনও কষ্ট বা খুশির অনুভূতি পেয়ে থাকে। কিন্তু বিষণ্ণতা হলো শূন্যতা, দুঃখ বা আনন্দ অনুভব করতে অক্ষমতার একটি দীর্ঘস্থায়ী অনুভূতি। যা স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটতে পারে। আর এই অবাঞ্ছিত ঘটনা থেকে বাঁচতে আমাদের জানতে হবে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কি এবং তা কেন হয়?
আমার একজন খুব পরিচিত, স্বনির্ভর নারী, উচ্চপদে চাকরি করেন, তার স্বামী ও প্রতিষ্ঠিত একজন। খুব সুখের সংসার তাদের। একদিন দুপুরে তার স্বামী তাকে ফোন করে বললেন, ‘আমি বাসায় চলে এসেছি, তুমিও আসো, একসাথে বাইরে খাবো আজ।’ তিনি অফিস থেকে বাসায় ফিরে বারবার দরজায় নক করছেন, ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই, বারান্দার কাছের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখেন, ফ্যানে ঝুলে আছেন তার স্বামী। হ্যাঁ নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছেন তিনি স্বেচ্ছায়।’
সেই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করার পর জানা গেলো, অনেকদিন যাবৎ তার স্বামী খুব মন খারাপ করে থাকতেন। কোথাও কোনো দাওয়াত থাকলে সেটা এড়িয়ে যেতেন। ভদ্রলোক আড্ডা দিতে দারুণ পছন্দ করতেন। কিন্তু মাসখানেক হলো বন্ধুদের আড্ডায়ও যেতেন না। প্রায় সসময় খুব তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ভীষণ অপরাধবোধে ভুগতেন। খাওয়া-দাওয়ায় বেশ রাশ টেনে দিয়েছিলেন। তার স্ত্রী যতই তার সঙ্গে এসব ব্যপারে জিজ্ঞেস করতেন বা কথা বলতে চাইতেন-তিনি বরাবর এড়িয়ে যেতেন।
তিনি ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। ডিপ্রেশন এর মতো মনরোগ, এই ব্যাপারগুলো হেমলকের মতো কাজ করে। বাইরে থেকে দেখে হয়তো বুঝবেনও না, আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর ভেতর কি ঘটে যাচ্ছে! নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় এদের। হয়তো সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি নিতে তার বুক একফোঁটাও কাঁপে না।
এমন মানুষ যে কেউ হতে পারে, হয়তো আপনার প্রতিষ্ঠানের ছোটভাই বোন, হয়তো বন্ধু, হয়তো পাশের বাড়ির কথা বলা মেয়েটি, হয়তো আপনার নিজের ভাইবোন, আবার হয়তো বা খুব কাছের কেউ।
গবেষণায় দেখা গেছে -
● বিশ্বব্যাপী, আনুমানিক ৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বিষণ্ণতায় ভোগেন
● প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ মনরোগের কারণে আত্মহত্যা করে
● বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে
● বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫ জন বিষণ্ণতায় ভোগে
● গবেষকদের মতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিষণ্ণতা রোগটি বৈশ্বিক রোগের বোঝার হিসেবে প্রথম স্থানে থাকবে
● পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন
বিষণ্ণতা আসলে কি?
দুঃখবোধের মতো সাধারণ আবেগ যখন অযৌক্তিক, তীব্র ও দীর্ঘসময়ব্যাপী কোনো ব্যক্তির মধ্যে দেখা দেয়, এবং এ কারণে যদি সেই ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাপন, কর্মতৎপরতা, সামাজিক সম্পর্ক ইত্যাদি ব্যাহত হয় এবং বাধাগ্রস্ত হয় তবে তাকে বিষণ্ণতা বলে।
বিষণ্ণতার লক্ষণ কি?
সাধারণত বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক এই তিন ধরনের সম্মিলিত লক্ষণ দেখা দেয়।
● ভীষণ মন খারাপ করে থাকা, ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে।
● সব ধরনের আনন্দকে বিষাদ মনে করা, অকারণে কান্নাকাটি করা।
● খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, কিংবা বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া করা।
● ঘুমে সমস্যা হওয়া। (ঘুম না হওয়া বা ঘুমালেও অনেক ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া, বা অস্বস্তি অনুভব করা ঘুমের মধ্যে)
● সারাক্ষণ অশান্তি অনুভব করা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বালাপোড়া করা।
● ভীষণ অপরাধ বোধে ভোগা এবং "আমি বোধ হয় কিছু পারবো না" এরকম অনুভব করা।
● ক্লান্ত অনুভব করা বা অবসাদ অনুভব করা।
● আত্মহনন করবো এরকম চিন্তার উদ্রেক হওয়া।
● মনযোগ দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা কিংবা মনে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।
বিষণ্ণতা কি নিরাময়যোগ্য?
বিষণ্ণতার কোনো প্রতিকার নেই, তবে এর কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে যা রোগীকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। যত আগে চিকিত্সা শুরু হবে, তত বেশি রোগীর ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে। কিছু লোক আছে যারা একবার বিষণ্ণতা থেকে ভালো হলে আর কখনও তা অনুভব করে না। অন্যদের পুনরায় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিভি/এনএ
মন্তব্য করুন: