• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কেন এতো আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত নরেন্দ্র মোদী? (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ৪ জুন ২০২৪

ফন্ট সাইজ

কখনো চা-ওয়ালা, কখনো গুজরাটের কসাই, কখনো আবার কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা, বা মুসলিম বিদ্বেষী কিংবা একনায়ক....নানা তকমা লেগে আছে তার গায়ে। একদিকে, তিনি যেমন আলোচিত, সমালোচিত আর বিতর্কিত, অন্যদিকে, তার মতো রাজনৈতিক সাফল্যও জওহরলাল নেহেরুর পর পাননি ভারতের আর কোন প্রধানমন্ত্রী।

বলছি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা। পুরো নাম নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। ভারতের রাজনীতিতে বিতর্ক আর মোদি যেন সমার্থক। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, প্রতিটি জায়গায় নাটকীয়তা ও বিতর্কে ভরপুর এই নেতার জীবন। নরেন্দ্র মোদী, ভারতের কট্টর হিন্দুদের কাছে যতোটা জনপ্রিয়, ততটাই সংখ্যালঘু মুসলিমদের কাছে এক শঙ্কার নাম। 

মোদির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা উত্তর-পূর্ব গুজরাটের ভাদনগরে এক চা বিক্রেতা বাবার ঘরে। তবে বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়, নরেন্দ্র মোদী, নিজে চা বিক্রি করেছেন কি-না তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। খোদ নরেন্দ্র মোদির ভাই প্রহ্লাদ মোদি এক জনসভায় দাবি করেন মোদি কখোনোই পেশায় চা-ওয়ালা ছিলেন না। তিনি শুধু ছোটবেলায় তার বাবাকে চা বিক্রির কাজে সাহায্য করতেন। এমনকি, নরেন্দ্র মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় গবেষণার কাজে গুজরাটে গিয়ে মোদির বাবার চায়ের দোকানের কোন খোঁজই পাননি। এমনকি সেখানে আদৌ কোনো চায়ের দোকান ছিল কিনা তা জানেন না সেখানকার প্রবীণরাও।

কিন্তু এই চা-কেই পুঁজি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। চা-ওয়ালা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, দেশটির গণতন্ত্রাতিক সাফল্যের সেরা বিজ্ঞাপন। আর সে বিজ্ঞাপনের মডেল এই নরেন্দ্র মোদী। তার আমলে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে অনেক। কিন্তু আছে মুদ্রার উল্টাপিঠও। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়, বেড়েছে বেকারত্বও। একই সাথে, তার আমলেই ভারতে সবচে বেশি ঘটেছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর জুলুম, নির্যাতনের ঘটনা। এনআরসি, সিএএ-এর মতো মুসলিম খেদাও কর্মসূচির নায়কও এই নরেন্দ্র মোদী। অবশ্য, ভারতে যতই বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষ, ইসলাম ফোবিয়া ততই বিজেপির পক্ষে বেড়েছে হিন্দু ভোট। খুব বেশি ক্যারিশমেটিক নেতা না হয়েও কেবল ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে ভোটব্যাংক বাড়িয়েছেন তিনি। 

বিতর্ক আছে নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও। সত্যিই তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী কি না, সরকারি বয়ান সত্ত্বেও সেই সংশয় ঘোচেনি। এখানেই শেষ নয়, বিবাহিত হয়েও কেন সংসার করেননি সে রহস্য কাটেনি আজো। ১৯৬৮ সালে ১৮ বছরের মোদী বিয়ে করেছিলেন ষোড়ষী যশোদাবেনকে। কিন্তু না করেছেন সংসার না ছেড়েছেন। না যশোদাবেনকে স্ত্রীর মর্যাদতা দিয়েছে, না বিচ্ছেদ পথে হেঁটেছেন। এমনকি দীর্ঘ সময় রাজ্যস্তরে নির্বাচনী হলফনামায় বিবাহিত জীবনের ঘরটি ফাঁকা রেখেছেন। 

ছোটবেলা থেকেই স্বামী বিবেকানন্দের জীবনীতে  অনুপ্রাণিত নরেন্দ্র মোদি, ১৯৭১ সালে যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে। ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ মোদিকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায়। এরপর ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকো।  ভারতের মূল ধারার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান শক্ত করতে থাকেন মোদি।

আর রাজনৈতিক অঙ্গনে, নরেন্দ্র মোদিকে ঘিরে সবচেয়ে বড় বিতর্ক গুজরাট দাঙ্গা। ২০০২ সালের যে দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্যে দায়ি করা হয় মোদীকে। দাঙ্গায় নিহতদের  মধ্যে ৭৯০ জন ছিলো মুসলিম নাগরিক। পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক ছিলো যে, গুজরাত কসাই-এর তকমা দেয়া হয় মোদীকে। কিন্তু এতো কিছুর পরও, ২০১৪ সাল থেকে পর পর দুই মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। 

মোদি ভারতের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি ১০ বছরে একবারের জন্যও কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি। পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেননি। এই দশ বছরে একটিবারের জন্যও কারও কাছে জবাবদিহি করেননি তিনি। আর এইভাবে মোদি গড়ে তুলেছেন একনায়কতন্ত্রের এক নতুন সংস্কৃতি। 

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন: