• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কোন পথে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক ?

ইমরুল কায়েস, চীন থেকে

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ২ জুলাই ২০২২

আপডেট: ১৩:১৮, ২ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
কোন পথে চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক ?

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং তার কেনিয়ার প্রতিপক্ষ, রেচেল ওমামো, ৬ই জানুয়ারী। ২০২২,ছবি-রয়টার্স

এশিয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলোর সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে চীন। বিশেষ করে দেশটির বেল্ট এন্ড রোড বা এক অঞ্চল এক পথ কর্মসূচির আলোকে এই সম্পর্কোন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এরইমধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সাথে চীন দ্বিপক্ষীয়ভাবে বন্দর, রেলপথ, সড়ক ও সেতু নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, সৌর প্রকল্প স্থাপন, জ্বালানী স্টেশন স্থাপনসহ বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দু’একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার মোমবাসায় সম্প্রতি চীন পরিবেশবান্ধব একটি তেল টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। এরফলে সমুদ্র বন্দরভিত্তিক শহরটিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশটির শিল্পায়নেও এই স্থাপনা অবদান রাখছে। একইসাথে করোনা মহামারি মোকাবেলায়ও দেশটিকে সহায়তা করছে চীন।

কেনিয়াকে আরও ১০ মিলিয়ন করোনার টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার। চলতি বছরের শুরুতে কেনিয়া সফরে গিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঘোষণা দিয়ে এসেছেন মহাদেশটির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য হর্ন অব আফ্রিকায় চীন একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করবে। শুধু তাই নয় আফ্রিকার অনুন্নত অনেক দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে কর্মদক্ষ করতে নানা প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করে চলেছে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তিধর এই দেশ। সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানের একদল সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে উন্নত সড়ক ও সেতু নির্মাণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে চীনা বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া তানজানিয়ার জুলিয়াস নায়ারে কলেজে প্রশিক্ষণগ্রহণরত আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের একদল তরুণ নেতাকর্মীকে চিঠির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। এরকম একটি দেশের ব্যস্ততম নেতার কাছে এমন চিঠির দিকনির্দেশনা পেয়ে খুশী সেখানকার তরুন রাজনৈতিক প্রজন্ম। এর মধ্যদিয়ে বোঝা যায় আফ্রিকার দেশগুলোর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও সম্পর্কোন্নয়নে কতটা মনোযোগী চীন সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টি। তাছাড়া আফ্রিকার দেশ সুদান, মালাবী, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, কমোরসসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নানারকম শিক্ষা বৃত্তি চালু করেছে চীন। তাদেরকে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করেছে দেশটি। এরকমই একজন শিক্ষার্থী সুদানের আলতিয়েব আলী। সে চীনের কুনমিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে কৃষি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। 
সম্প্রতি সিনহুয়া নেটকে সে জানিয়েছে চায়না বৃত্তির মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা হওয়ায় সে খুবই খুশী। দেশে ফিরে গিয়ে সে সোলার এনার্জি নিয়ে কাজ করতে চায়। তার মত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অনেকেই চায়না বৃত্তি নিয়ে চীনের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। 

উপরের উদাহরণগুলি ছাড়াও একটা পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে আফ্রিকার সাথে চীনের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে। বার্তা সংস্থা সিনহুয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সহযোগিতার ভিত্তিতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চীন ১০ হাজার কিলোমিটার রেলপথ, এক লাখ কিলোমিটার সড়ক পথ, এক হাজার সেতু, প্রায় একশোটি বন্দর এবং কয়েকশ’ হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছে। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য উদ্যোগের কারণে চীন-আফ্রিকার সম্পর্ক এখন সব্বোর্চ্চ পযায়ে রয়েছে। আফ্রিকার জনগণের কাছেও চীনের এই উন্নয়ন অবদান ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। নানা সময়ে গৃহযুদ্ধ এবং আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত থাকায় দরিদ্রতায় জর্জরিত আফ্রিকার জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো এখন চায় উন্নয়ন। এক অঞ্চল এক পথ কর্মসূচির মাধ্যমে মহাদেশটির সেই চাওয়াকে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় আফ্রিকায় চীনের ইতিবাচক প্রভাব বেড়েছে। সম্প্রতি (১৩ জুন) ব্লুমবার্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। একটি জরিপের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইচকোভিচ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন ১৫টি দেশের ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী চার হাজার ৫০৭ জন আফ্রিকান তরুণ-তরুণীর ওপর জরিপ চালায়। এতে দেখা যায় উত্তরদাতাদের ৭৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করে তাদের জীবনাচারে চীনের ইতিবচাক প্রভাব রয়েছে। ২০২০ সালের একই জরীপে যা ছিল ৬৯ শতাংশ। জরীপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইচকোভিচের মতে, গত দুই দশকে আফ্রিকার অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদান, হাতে হাতে মোবাইল পৌঁছে দেয়া, সোলার প্যানেল সরবরাহসহ অন্যান্য পণ্য কম দামে দেয়ায় দিন দিন আফ্রিকানদের মাঝে চীনের জনপ্রয়তা বাড়ছে। তারই ফল জরীপে উঠে এসেছে বলে জানান তিনি। আফ্রিকা মহাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে এটি অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

মন্তব্য করুন: