• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাফিক জ্যামে সময় কাজে লাগানোর ১০ উপায়

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২১ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
ট্রাফিক জ্যামে সময় কাজে লাগানোর ১০ উপায়

ঢাকার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত ট্রাফিক জ্যাম। মূল্যবান সময়কে উপেক্ষা করে মুহুর্মুহু বেড়ে চলেছে ট্রাফিক জ্যাম। ছোট্ট রাজধানীবাসীদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে অমূল্য সময়গুলোকে অর্থপূর্ণ করতে না পারার আফসোস নিয়ে। কিন্তু চরম এই মুহূর্তে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আরও সময় নষ্ট করার চেয়ে অবস্থার সঙ্গে জীবনধারণকে মানিয়ে নেয়াটা উত্তম।

ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়গুলোকে কী করে ফলপ্রসূ করা যায় তা জেনে নিন-

আগামীকালের পরিকল্পনা করা

জীবন সংসারের কাজগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তার অনুকূলে কর্মপরিকল্পনাগুলো মানুষের অভ্যস্ততার সঙ্গে মিশে যায়। আর এর জন্যেই বেশি রাত করে ঘুমানোর পরেও সকাল ৭টার ট্রেন ধরতে কেউ মিস করে না। তবে আগের রাতে কাপড়-চোপড়গুলো ঠিকঠাক ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে হয়। ঠিক তেমনি আগামী দিন কার কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, কোথায় কোথায় যেতে হবে, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়গুলো ট্রাফিক জ্যামে বসেই ঠিক করে ফেলা যায়। যেহেতু আগামীকালও ট্রাফিক জ্যাম থাকবে, সেহেতু সেই কাজগুলোর জন্য সময়ের সঠিক হিসাব করে রাখা জরুরি। আর তার জন্য আজকের ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা মুহুর্তগুলোই সেরা সময়।

আসন্ন কাজের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া

শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী সকলেই নির্দিষ্ট কাজ নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়টিতে সেই কাজের নিমিত্তে শেষবারের জন্য নিজেকে একবার ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। শিক্ষার্থীদের হরহামেশা পরীক্ষার জন্য রিকশায় বসেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিড়বিড় করতে দেখা যায়। কর্মজীবীরা অফিসের মিটিংয়ের এজেন্ডা, প্রেজেন্টেশন বা ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিংয়ের বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি এ সময় ভালো করে একবার দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও কোন বন্ধু-বান্ধব এমনকি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। যে কোনো নিক্ষুত যোগাযোগ বা কথোপকথোনের জন্য এরকম পূর্বপ্রস্তুতি অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দেয়।

অনলাইনে খবর পড়া

রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে স্থানীয় খবর থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ব্যাপারে সর্বশেষ খবরটি জানা থাকা উচিত। নিদেনপক্ষে, আগামীকাল নির্দিষ্ট কোনো কারণে শহরের অধিকাংশ রাস্তায় অধিক জ্যাম থাকবে কিনা তার জন্যও খবরের পোর্টালগুলোতে চোখ বুলানো দরকার। পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে প্রায়ই অনেককে খবরের কাগজ পড়তে দেখা যায়। তাছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও হালনাগাদকৃত খবরগুলো পাওয়া যায়।

ডিআইওয়াই (ডু ইট ইয়োরসেল্ফ) ভিডিও দেখা বা আর্টিকেল পড়া

ইউটিউবের কল্যাণে এখন এই ধরনের ভিডিওগুলো পাওয়া খুব সহজ হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক ছোট-খাট কাজ থাকে, যেগুলোর জন্য অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায় যে কাজগুলো আসলে অতটা কঠিন নয়। একবার দেখে নিলেই যে কেউ নিমেষেই কাজগুলো করতে পারে। বাসা থেকে বেরনোর সময় হয়ত কোনো ফার্নিচারের ছোট একটি অংশ বেকায়দায় আলাদা হয়ে গেছে, দরজার নব খুলে গেছে, বেসিনের সিঙ্কের পাইপে লিক হয়েছে ইত্যাদি। এগুলোর কীভাবে ঠিক করতে হয় তা জ্যামে বসে নিজেই শিখে ফেলা যায়। এতে খরচও বাঁচবে আর সাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রেও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।

দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ জ্ঞানচর্চা

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া, মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা, নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তি, একাডেমিক ও প্রোফেশনাল ডিগ্রি ইত্যাদিসহ এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো বিভিন্ন কথোপকথোনে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনেক সময় এগুলোর মধ্যকার প্রাথমিক বা তুলনামূলক জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে প্রয়োগের ক্ষেত্রে লজ্জায় পড়ে যেতে হয়। বয়স অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, এগুলো জিজ্ঞেস করলে বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল কখনোই লজ্জা দিবে না। এই কাজটির জন্য ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকার সময়টা উপযুক্ত।

নিত্যনৈমিত্তিক জরুরি প্রযুক্তি বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞানচর্চা

বর্তমান শিক্ষা ও চাকরির বাজারে প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। তাই যারা নিজেদেরকে অবিরাম জ্ঞানচর্চার মাঝে রাখতে সক্ষম, তাদেরকে তথ্য ও প্রযুক্তির শাখাটিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া প্রযুক্তির নানা উপকরণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের সঙ্গে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাই প্রযুক্তি নির্ভর দ্রব্য ও সেবাগুলোর ব্যাপারে প্রাথমিক জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ইন্টারনেটে যে কোনো স্তরের মানুষকে প্রযুক্তিবান্ধব করার জন্য বিশাল ভাণ্ডার আছে। শুধু নির্দিষ্ট শব্দটি টাইপ করে গুগলে সার্চ দেয়ার অপেক্ষা। এভাবে ট্রাফিক জ্যামবন্দি সময়গুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

ইংরেজি ভাষা অনুশীলন

ইংরেজি ভাষার সর্বাঙ্গীণ আয়ত্তের জন্য প্রয়োজন জীবন ধারণের সঙ্গে ইংরেজি চর্চাকে সংযোজন করা। সারা দিনে নানা কাজে এই ভারসাম্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই তা অনুসরণ করা যায়। মনে মনে নতুন কোনো শব্দ আওড়ানো অথবা পুরনো শব্দ বা তার প্রতিশব্দ দিয়ে বাক্য গঠনের কাজগুলো বেশ দারুণভাবে করা যেতে পারে। শুধু তাই নয়; জ্যামে আটকে থেকে আশেপাশের দোকানের সাইনবোর্ড, বড় বিলবোর্ড, পোস্টারে ইংরেজি শব্দ খুঁজে বের করে তার প্রতিশব্দ মনে করা বা তা দিয়ে বাক্য রচনা করা যেতে পারে।

অনলাইনে স্ট্যান্ডআপ কমেডি শো দেখা বা পডকাস্ট শোনা

ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকার সময়ে সবচেয়ে শক্ত কাজ হলো মনকে শান্ত রাখা। কিন্তু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা হতাশাগ্রস্ত মন ও শরীর দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। তাই মনকে হালকা রাখার জন্য ছোট ছোট মজার গল্প দেখা বা শোনা যেতে পারে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্যান্ডআপ কমেডির ট্রেন্ড শুরু হওয়াতে রিয়েলিটি শোতেও এগুলো স্থান পাচ্ছে। এগুলোতে বলা হালকা ও ভারী কৌতুকগুলো নিমেষেই মনকে ভালো করে দিতে পারে। এছাড়া ক্লাসে বা কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে কিছু কৌতুক জেনে গেলে বন্ধু-বান্ধবদের বা সহকর্মীদের শুনিয়ে আড্ডা বা মিটিংকে আরও মজাদার করে তোলা যায়।

গল্প, উপন্যাস বা ব্লগ পড়া

যাদের ভ্রমণের সময় বই পড়ার অভ্যাস আছে, তাদের ট্রাফিক জ্যামের সময় কাটানোর জন্য এই উপায়টি সেরা। এখন মোবাইলের মধ্যেই পিডিএফ ফাইলে হাজার হাজার পৃষ্ঠার উপন্যাসগুলো সহজেই রাখা যায়। অবশ্য এই কাজটি শুধুমাত্র জ্যামের নিরব একঘেয়ে মুহুর্তগুলোর জন্য। কেননা চেচামেচির মধ্যে গল্প বা উপন্যাস যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তাতে মন বসানো দুষ্কর। বইয়ের পিডিএফ ভার্সন না নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মগুলোতে ব্লগ পড়া যেতে পারে। কথোপকথোনের ভঙ্গিমায় লেখা সেই ব্লগগুলো দীর্ঘ জ্যামের মধ্যে ঠিক বন্ধুর মতই সঙ্গ দেবে।

অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখা বা অডিও শোনা

প্রতিদিন গন্তব্যে যাওয়ার সময় চিৎকার-চেচামেচি ও গালাগালি ট্রাফিক জ্যামের স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক থাকাটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেকের ক্ষেত্রে এই দুর্ঘটনাগুলো তাদের জীবনের ওপরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এমতাবস্থায় আশপাশটা উপেক্ষা করে অনুপ্রেরণামূলক ভিডিওর দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। এটা সম্ভব না হলে ঝামেলা শেষ হয়ে যাবার পর তার রেশ যেন মনের মধ্যে না থাকে তার জন্য ইতিবাচক ভিডিওগুলো দেখা দরকার। এতে করে মনটাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষাক্ত অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। এই প্রেরণাদায়ক কন্টেন্টগুলো অনেকটা ভাইরাস থেকে মাস্কের আর ব্যাকটেরিয়া থেকে হ্যান্ড-স্যানিটাইজারের মত কাজ দেয়।

মন্তব্য করুন: