বর্ষবরণঃ সর্বোচ্চ শব্দ ও বায়ু দূষণ নিয়ে শুরু হয় নগরবাসীর নতুন বছর
রাজধানী ঢাকা গত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণের তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। শুষ্ক মৌসুমের প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ পৌঁছায় মানুষের সহ্য ক্ষমতার কয়েকগুণ উপরে। তবে গবেষণা বলছে বছরের অন্য দিনগুলোর তুলনায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা শহর বায়ু ও শব্দ দূষণে সব রেকর্ড অতিক্রম করে।
বিগত চার বছর ধরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বায়ু ও শব্দদূষণ পরিমাপ করে এই তথ্য জানিয়েছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।
গবেষণাটিতে জানানো হয়, ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর ও পহেলা জানুয়ারি দু’দিনের শব্দ ও বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করে আসছে ক্যাপস। এতে দেখা যায় ৩১ ডিসেম্বরের তুলনায় নতুন ১ জানুয়ারি ঢাকার বায়ু ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দূষিত থাকে। এই সময় বায়ুমান পৌঁছায় ৫০০ একিউআই পর্যন্ত। যা মানুষের সহ্য ক্ষমতার তুলনায় ৯ গুণ বেশি।
একই চিত্র দেখা যায় শব্দের ক্ষেত্রেও। চার বছর ধরে ৩০ ডিসেম্বর রাতের সংগে ৩১ ডিসেম্বর রাতের শব্দমান তুলনা করেন তাঁরা। এতে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত যেখানে শব্দমান ৩০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায় সেখানে ৩১ ডিসেম্বর একই সময়ে পাওয়া যায় ১১০ ডেসিবেল পর্যন্ত। যা একজন মানুষকে বধির করে দেওয়ার শক্তি রাখে।
এ বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রধান ও বায়ুমান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, অতিরিক্ত বায়ু দূষণ সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে ফুসফুসে সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত শব্দ দূষণে বধিরও হতে পারে মানুষ। তাই আমরা গত ৩ বছর ধরে বর্ষবরণ কেন্দ্রীক দূষণ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। আমাদের গবেষণায় আমরা বছরের অন্য সব দিনের তুলনায় এই রাতে সর্বোচ্চ বায়ু ও শব্দ দূষণ রেকর্ড করেছি।
মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিবেচনায় দিবস উদযাপনকেন্দ্রীক শব্দ ও বায়ুদূষণকারী বাজি ফুটানো, ফানুস ওড়ানো বন্ধের দাবি জানান এই পরিবেশবিজ্ঞানী।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদফতর। যার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুমায়ুন কবির। জনগণকে নিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এই প্রকল্পের মূল কাজ হলেও এই দিবসে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি তাদের। এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।একই সংস্থার বায়ুমান শাখার পরিচালকের কাছে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন তিনি।
বিভি/কেএস/এসডি
মন্তব্য করুন: