• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সেনা চায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বিমান-হাসপাতাল-কারাগারেও সুবিধা চায় গণফ্রন্ট

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২১ জুলাই ২০২২

আপডেট: ২১:৫৯, ২১ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
সেনা চায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বিমান-হাসপাতাল-কারাগারেও সুবিধা চায় গণফ্রন্ট

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনের ৩ মাস পূর্ব থেকে এবং নির্বাচনের পরবর্তী কমপক্ষে একমাস পর্যন্ত মেজিট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ এক গুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। আর প্রয়োজনবোধে সেনা বাহিনী মোতায়েনসহ সরকার এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য বিমান, রেল, হাসপাতাল ও কারাগারে  সমান সুবিধা চায় গণফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে এ সকল প্রস্তাবনা দিয়েছে দল দু’টি।

লিখিত প্রস্তবনায় দলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মুকিত বলেন,  এ কথা অনস্বীকার্য যে- ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে দেশে-বিদেশে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হওয়া দু:খজনক। অপনাদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর অনেক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পুর্বেই আপনারা আপনাদের সততা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এমন ভুমিকায় অবতীর্ন হবেন যাতে করে বিতর্কমুক্ত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনগন আপনাদের প্রতি আস্থাশীল হতে পারে।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রস্তাবনাগুলো হলো:- সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য সরকারের নিকট নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হতে প্রস্তাব প্রেরন করতে হবে; নির্বাচনের কমপক্ষে ৬ মাস পুর্বে ভোটারদের হালনাগাদ তালিকা ওয়েব সাইটের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে; নির্বাচনের ৩মাস পুর্ব থেকে এবং নির্বাচনের পরবর্তী কমপক্ষে একমাস পর্যন্ত মেজিট্রেসী ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহন করতে সরকারকে অনুরোধ জানাতে হবে; নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষে আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনীর ও নির্বাচন কমিশনের জনবলের সল্পতার কথা বিবেচনা করে জাতীয় নির্বাচন প্রশাসনিক বিভাগ ওয়ারি অর্থাৎ এক বিভাগে একদিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং নির্বাচন শেষে এক দিনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে হবে; যে সকল কর্মকতার রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল বা আছে এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার সকল পর্যায়ে দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত রাখতে হবে; ভোট দানের গোপন কক্ষ ব্যতিত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ও বুথে অনিয়ম রোধে সি.সি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভোট কেন্দ্রের বাহিরে বড় মনিটরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে বিদেশে অবস্থিত দুতাবাস ও কন্সুলেটগুলোতে তাদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহন এবং এই ভোট গ্রহন কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না বা বর্তমানে নাই এমন কর্মকর্তাদের দায়ীত্ব প্রদান নিশ্চিত করতে হবে; আগামী নির্বাচন থেকেই সল্প পরিসরে হলেও ই-ভোটিং চালু করতে হবে; সকল দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না; নির্বাচন কমিশনের খরচে ও উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীদের পর্যাপ্ত পরিমান পরিচিতি সভা (এক মজ্ঞে সবাই) অনুষ্ঠানের বিধান করতে হবে; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়নসহ এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ব্যালট পেপারে “না” ভোট এর বিধান চালু করতে হবে; এবং নির্বাচনের সময় সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগন সরকারী ব্যয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালায়। অন্যদিকে অনেক বিরোধী দলকে অনেক রানৈতিক সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। তাই সরকারী ব্যয়ে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারনা চালানো হতে বিরত রাখতে নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলগুলো যাতে এখন থেকেই সভা-সমাবেশ করতে পারে তাহা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে ভুমিকা রাখতে হবে।

বিমান-রেল, হাসপাতাল ও কারাগারের সমান সুবিধা চায় গণফ্রন্ট:

সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের মতো বিমান-রেল, হাসপাতাল ও কারাগারের সুযোগ-সুবিধা চেয়েছে গণফ্রন্ট। দলটির প্রস্তাবনাগুলো হলো:- রাজধানী ঢাকার মত অন্যান্য বড় বড় শহরের আয়তন ও লোকসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার জন্য আইনী কাঠামোর সংস্কারের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি বাস্তবতার নিরিখে আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সংসদের আসন সংখ্যা নূন্যতম ৩৫০/৪৫০ হতে পারে; মহিলা আসনে প্রতি জেলা ও প্রতি মহানগরী হতে একজন করে মহিলা সাংসদ সংরক্ষিত মহিলা আসনে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করছি। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকরী কমিটিসহ সকল স্তরে ১/৩ মহিলা সদস্য রাখার বিধান চালু রাখার পাশাপাশি মহিলা আসন বৃদ্ধি করা যুক্তিযুক্ত; প্রত্যেকটি নিবন্ধিত দলের নিকট হালনাগাদ একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে বিনা মূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে; একই পোস্টারে সকল প্রার্থীর পরিচয় ও প্রতীক এবং একই মঞ্চে সকল প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্যের ব্যবস্থা গ্রহণ।

নির্বাচনকালীন সময় প্রার্থীর মিছিল নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে হবে, চা-নাস্তা খাওয়ানোর জন্য নির্বাচনী ক্যাম্পের সংখ্যা কমাতে হবে; নির্বাচনী ব্যয়ের সীমারেখা নির্ধারিত করার পাশাপাশি তা সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে
কিনা, তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; নির্বাচন কমিশনের নিকট নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করছি; স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তি, বিদেশী নাগরিক, এনজিও প্রধান ও দূর্নীতির অভিযোগ সাজাপ্রাপ্ত এমন ব্যক্তির নেতৃত্বে কোন দল যাতে নিবন্ধিত হতে না পারে এবং দলীয় প্রধান না থাকতে পারেন সে ব্যাপারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে; নির্বাচনে প্রয়োজনবোধে সেনা সদস্য মোতায়েন করতেই হবে; কোনো অবস্থাতেই ঋণ কর ও বিল খেলাপীকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া যুক্তি যুক্ত হবে না; নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরকে রির্টার্নিং অফিসার করলে অপেক্ষাকৃত ভাল ফল পাওয়া যাবে; নির্বাচনে অনিয়ম হলে প্রিজাইডিং অফিসারেরর হাতে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা দিতে হবে।

বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়, একটি নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার অবশ্যই গঠন করতে হবে; নির্বাচন কমিশন একটি সার্কুলার জারী করতে পারেন যে অনিবন্ধিত দল নিবন্ধিত দলের সাথে জোট করতে পারবে না; নির্বাচনের অন্তত ছয়মাস পূর্বেনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রধানের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; সরকার এবং বিরোধী দলের সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের জন্যও বিমান/রেলওয়ের টিকিট, হাসপাতালের কেবিন, কারাগারের ডিভিশন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করার প্রস্তাব করছি; নতুন প্রযুক্তি দেশবাসীর নিকট সম্পূর্ণ বোধগম্য হওয়ার পূর্বেনপরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে ইভিএম চালু করা যেতে পারে।

বিভি/এইচকে

মন্তব্য করুন: