ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই
‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই’
ছবি: ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেছেন, ১৬ বছর ও ৫৩ বছরের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া যারা নির্বাচনের কথা বলে তারা মনে হয় ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। আমাদের জাতীয় ঐক্য থাকতে হবে। দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের নেতৃত্বে যারা আওয়ামী লীগকে আনতে চায় তারা দেশের শত্রু। অতীতের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট তৈরি হয়েছে। তাই আমরা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তিনি ইউসুফ আহমদ মানসুরকে সভাপতি, মুহাম্মাদ মুনতাসির আহমদ কে সহ-সভাপতি ও শেখ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কে সেক্রেটারি জেনারেল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
পীর চরমোনাই আরও বলেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশসহ সাহাবাদের অনুসরণের কাফেলা। সাহাবাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জুলাই আগষ্ট এর অভ্যুত্থানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে ব্যানার নিয়ে আওয়াজ করেছে। এই সংগঠনের অনেক ছাত্র শাহাদাত বরণ করেছে, আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলো। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে বলেছি যাতে মানুষের আক্বিদা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যাতে না যায়। তারপরও আপত্তি করার পরেও ফারুকীকে সরিয়ে দেয়া হয়নি। আশাকরি সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। দেশে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর দেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। হাসিনার সহযোগিদের বিচার করতে হবে। বাংলাদেশে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের কোন কুচক্রীদের কে কিছু করতে দিবো না। মুদি সরকার একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে ৩ জন মুসলমান কে হত্যার ঘটনায় তারা কিছু বলছে না। হাসিনাকে দেশে এনে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে উঠাতে হবে। আমরা সংস্কারের পরে নির্বাচন চাই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন রুহানিয়াত ও জেহাদের প্রয়াস। এ সংগঠন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চায়। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন কাজ করছে। সাহসিকতার সাথে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিতর্কিত কার্যক্রম এ তারা বিতর্কিত করেছে। ফারুকীকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেয়া হয় নি। সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। মানুষের অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভারত পায়ে পাড়া দিয়ে যুদ্ধ করতে চায়।
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এর সদস্যদের টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে পাওয়া যায় না।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশর আজিজীর সভাপতিত্বে সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ মুনতাসির আহমদ এর পরিচালনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম প্রমুখ। সম্মেলন ঘোষণা পাঠ করেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানছুর।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইউসুফ আহমদ মানসুর কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ১৩ দফা ঘোষণা উপস্থাপন করেন-
১. পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনকে বিচারের আওতায় এনে বিগত ১৬ বছরের দুঃশাসনের বিচার করতে হবে।
২. জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী, হামলার নির্দেশদাতাও এসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৩. ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে ভারতের নিকট থেকে নিজেদের সকল হিস্যা বুজে নিতে হবে।
৪. প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি নয়, বরং জনকল্যাণমুখী ও শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতি চর্চায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।
৫. সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং ক্যাম্পাসে সকল মত ও পথের শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৬. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে, আহতদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকুরীর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাৰ্থীদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. সরকারি চাকরিতে থাকা শূন্যপদ পূরণে দ্রুত সার্কুলার জারি করে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে বেকারত্ব হ্রাসে রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে।
৯. দেশপ্রেমিক সুনাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে দেশীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় সম্পদ ও শ্রমবাজার কাজে লাগিয়ে নিজস্ব অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পতিত সরকারের পাচারকৃত সকল অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দূর্ণীতিবাজ সাবেক আমলা, সংসদও পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
১১. রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারে বাধা বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান, তাই টেকসই সংস্কারের লক্ষ্যে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে ইসলামের মূল ভিত্তিকে সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের বোধ-বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।
১২. শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, দেশের সকল নাগরিকের জন্য বৈষম্যমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক, কর্মমুখী সার্বজনীন ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, এবং দেশের সকল নাগরিককে শিক্ষার আওতায় আনতে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার স্তর দশম শ্রেণি পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে।
১৩. ইসলামি খেলাফতবিহীন এ ভূমিতে মুসলিম উম্মাহর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: