• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

২০ জুলাই : দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা টহল জোরদার, সংঘর্ষে নিহত ৩৭

বাসস

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ২০ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
২০ জুলাই : দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা টহল জোরদার, সংঘর্ষে নিহত ৩৭

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের টানা দুই দিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পর ২০২৪ সালের ২০ জুলাই (শনিবার) দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।

প্রথম দফায় ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২০ জুলাই (শনিবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বেলা ২টা থেকে আবার কারফিউ শুরু হয়। ২১ জুলাই (রোববার) বেলা তিনটা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।

এছাড়া ২১ ও ২২ জুলাই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ ২১ জুলাই থেকে সারাদেশে পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ সেবা বন্ধ রাখে সরকার। কারফিউ চলার সময় সারাদেশে যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকে। এদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩৭ জন নিহত হন। এর মধ্যে ঢাকায় দুই পুলিশসহ ২৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও সাভারে ৪ জন করে, গাজীপুরে ২ জন এবং নরসিংদীতে ২ জন নিহত হন। (সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়, ২১ জুলাই,২০২৪)

শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমর্থক সন্ত্রাসীরা জ্বালাও-পোড়াওসহ সহিংসতা চালাচ্ছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়ক বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে চায়, তাহলে এটা তারা সমর্থন করবেন না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোটা আন্দোলনে ভর করে বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে।’

২০ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব, উত্তরা, মেরুল বাড্ডা ও মিরপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত এবং অন্তত ৯০ জন আহত হন।

মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিকেটার ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জননিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কারফিউ জারির কারণে রাজধানীর প্রধান বিপণিবিতান ও প্রধান সড়কের পাশের দোকানপাট বন্ধ ছিলো। সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম।

জননিরাপত্তায় জারি করা কারফিউ কেউ অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হবে বলে ডিএমপির গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এদিন গভীর রাতে মিন্টো রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের মন্ত্রীরা। এ সময় তারা সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ৮ দফা দাবি মানলেই কেবল কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হবে বলে জানান তারা।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করেছেন, তা যৌক্তিক এবং সমাধানযোগ্য।’

২০ জুলাই রাজধানীতে সহিংসতা ঠেকাতে র‍্যাবের হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত ছিল। রাজধানীর বঙ্গভবন, গণভবন, বেতার ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অধিদপ্তর, সাব-অফিস, থানা ভবন, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন, সারাদেশের কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে কারফিউ পাস নিয়ে জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাইরে বের হতে হয়।

সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ ও কাজলা এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে রায়েরবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ বেশকয়েকজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।

এদিন সকাল থেকে রামপুরা, বনশ্রী ও বাড্ডা এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে ভাটারা এলাকায় ইউআইইউ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকালে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট ও আজিমপুর এলাকায়ও বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।

মোহাম্মদপুরের বছিলায়ও কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুর রেলগেট এলাকায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা আজমপুরে সেক্টর-৬-এ অবস্থিত হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়।

এদিন সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলকারীরা। এতে ওই ভবনে থাকা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে যায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ গিয়ে হেলিকপ্টারের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও ওই ভবনে থাকা হাসপাতাল, ব্যাংক, চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শনিবার দুপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এছাড়াও সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়েও হামলা-ভাঙচুর করা হয়। সাভার রেডিও কলোনিতে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হন ২৫ জন। পরে সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2