• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি নারী মৈত্রীর

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি নারী মৈত্রীর

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ফিলিপ মরিসের নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে নারী মৈত্রী। এই সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়াসের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। সেই সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী অবিলম্বে পাস করার দাবি জানিয়েছে তারা।

বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি এসআরও জারির মাধ্যমে ই-সিগারেট/ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর মে মাসে দেশে ই-সিগারেট/ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিষ্টেম (ENDS) যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বৈশ্বিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনে কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের মতো নিকোটিন পাউচও শরীরে নিকোটিন গ্রহণের একটি পদ্ধতি। এটি একটি নতুন ধরনের পণ্য যার মাধ্যমে ধূমপান বা তামাক চিবানো ছাড়াই নিকোটিন গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন সুগন্ধি এবং রাসায়নিক মিশিয়ে বাজারজাত করা হয় পণ্যটি। বিশ্বের বহু দেশ জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ করেছে। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে দেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।

তামাক কোম্পানি নিকোটিন পাউচকে ‘তুলনামূলক কম ক্ষতিকর’ বলে দাবি করলেও প্রচলিত ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মতই এর গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিওএইচও, সিডিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। বর্তমানে নিকোটিন পাউচ ও এধরনের নতুন প্রজন্মের পণ্য শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করছে। বেলজিয়াম, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ৩৪টি দেশ ইতোমধ্যে এই নিকোটিন পাউচ বিক্রয় নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এ বিষয়ে নারী মৈত্রীর সভাপতি মাসুমা আলম বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশ জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ করেছে। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে দেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এটি দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকী। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই অনুমোদন বাতিল করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি (FCTC) চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হলেও এখনো তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশ হলে এফসিটিসির মানদণ্ড অনুযায়ী আইনটি শক্তিশালী হবে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তা হবে এক বড় পদক্ষেপ। তাই আমি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি ফাহমিদা আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় দেশে ই-সিগারেট/ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিষ্টেম (ENDS) যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনা দেয়ার পরও এই নিকোটিন পাউচ কারখানা স্থাপনের অনুমোদন সরকারের নীতি এবং সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের লঙ্ঘন। এটি দেশের তরুণ, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তাই বেজা কর্তৃক ফিলিপ মরিসকে দেওয়া নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

হেলথ রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বী বলেন, ‘সমাজ বদলের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়ে নীতিনির্ধারকরা যখন নিকোটিন পাউচের মত জীবনঘাতি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন দেয় তখন সেটা জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়। এই প্রতারণার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’

উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লাবিন রহমান বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের ত্যাগে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে। নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দিয়ে সরকার অনেক নিন্দনীয় কাজ করেছে। আমি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানাই।’

তিনি তার বক্তব্যে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানান।

নারী মৈত্রী ইয়ূথ ফোরামের সদস্য আশরাফিয়া জান্নাত বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) এখনো নিকোটিন পাউচকে চিকিৎসাগত বা নিরাপদ পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেয়নি। বরং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটিকে অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের মতই ক্ষতিকর বিবেচনা করছে। সেখানে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে জেনে বুঝে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করা। এই ক্ষতি করার অধিকার কারোরই নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন নিকোটিন পাউচ উৎপাদন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বৈধ ব্যবসা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নিষেধাজ্ঞা জারির পরও কীভাবে এটি বৈধ ব্যবসা হয়? এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত প্রহসনের নামান্তর। অবিলম্বে এই প্রহসনের অনুমোদন বাতিল করতে হবে।’

উল্লেখ্য, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা । তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ইতিমধ্যে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ ও দেশের অভ্যন্তরে ই-সিগোরেট উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে। 

নারী মৈত্রী আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন নারী মৈত্রী টিচার্স ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো, নারী মৈত্রী মাদারস ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো ও নারী মৈত্রী ইয়ূথ ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এর সদস্যবৃন্দ।

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন: