• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সামাজিক মাধ্যম থেকে ডা. মুরাদের অডিও ক্লিপস অপসারণ কি সম্ভব!

শুভ ইসলাম 

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:৪৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
সামাজিক মাধ্যম থেকে ডা. মুরাদের অডিও ক্লিপস অপসারণ কি সম্ভব!

দেশে গত কয়েকদিন ধরেই “টক অব দ্যা টাউন” ডা. মুরাদ হাসান-এর নানান কর্মকান্ড। সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম না রাখা, একটি রাজনৈতিক পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য এবং সবশেষ নায়ক ইমন ও নায়িকা মাহি’র সংগে তাঁর ফোনালাপের সূত্রে সৃষ্ট বাতাবরণের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নির্দেশনায় মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপরই ধানমন্ডিতে বাসা রেখে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাঁর রাত্রিযাপনের ঘটনা চাউর হয়। মানহানিকর মন্তব্যের জেরে ইতিমধ্যে (মঙ্গলবার সন্ধ্যায়) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন-এর মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান-এর হাইকোর্ট বেঞ্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সদ্য পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান-এর ‘কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য’ সম্বলিত অডিও-ভিডিও অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ব্যারিস্টার সুমন আদালতে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অশ্লীল অডিও-ভিডিওগুলো অপসারণ না করা হলে কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা এই ধরনের অশ্লীল কথা-বার্তা শুনে বিপথগামী হতে পারে। 

এই বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সদ্য পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান-এর অডিও ক্লিপসটি সামাজিক মাধ্যম থেকে অপসারণের বিষয়ে কোর্টে মৌখিক আবেদন করেছি। কোর্ট বিটিআরসিকে আগামীকাল (৮ ডিসেম্বর) বুধবারের মধ্যে তাঁদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

এই বিষয়ে বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস ডিভিশন (এসএস)-এর পরিচালক সাজেদা পারভীন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে কোর্টের আদেশের বিষয়টি আমাদের আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কন্টেন্ট সরানোর বিষয় নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে বলেও জানান তিনি। 

বিটিআরসি’র ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, কোর্টের নির্দেশনার পর কন্টেন্ট সরানোর বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আগামীকালের মধ্যে কন্টেন্ট অপসারণ সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। যেহেতু কন্টেন্ট অপসারণের কাজ চলছে, আগামীকাল পর্যন্ত যতোটুকুু অগ্রগতি হবে, সেটুকুই আমরা কোর্টকে অবহিত করবো।  

সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সামাজিক মাধ্যম থেকে কোনো কন্টেন্ট রিমুভালের বিষয়টি মূলতঃ নির্ভর করে মূল কোম্পানির উপর। এই রকম কোনো ভাইরাল ইস্যুকে কেন্দ্র করে যখন সরকারের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা হয়, তখন কোম্পানিগুলো সেই আবেদন তাদের পলিসির সংগে তুলনা করেন। যদি সেই আবেদন আইনসংগত হয় সেক্ষেত্রে কন্টেন্ট রিমুভ করা হয়। নতুবা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। 

সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের আবেদন করা হলে যাচাই-বাছাই এর পর সাধারণত সেটি গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে সদ্য পদত্যাগ করা ডা. মুরাদের অডিওটিও সামাজিক মাধ্যম থেকে সরানো হবে বলে আশা করেন তিনি। কিন্তু যদি আবেদন গৃহীত না হয়, তাহলে সরকার বা বিটিআরসি’র সক্ষমতায় কন্টেন্ট সরানোর বিষয়ে সন্দিহান এই সাইবার বিশেষজ্ঞ। 

সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম বরকতুল্লাহ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, বিটিআরসি, সামাজিক মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদির দেশীয় ফোকাল পয়েন্ট। সামাজিক এসব মাধ্যম থেকে কোনো ভাইরাল কন্টেন্ট সরানোর জন্য অবশ্যই বিটিআরসিকে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোর কাছে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোর্টের আদেশ, দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী কোনো বিষয়, দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক এসব মাধ্যম কন্টেন্ট সরানোর সম্মতি দেয়। এক্ষেত্রে সামাজিক এসব মাধ্যমের সংগে ফোকাল পয়েন্টের যথোপযুক্ত যোগাযোগের উপর নির্ভর করে কোন্ কন্টেন্ট সরানো হবে, কোনটি হবে না।

এই বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেব বলেন, এই ধরনের ইস্যুতে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোনো একটি অডিও বা ভিডিও যখন ভাইরাল হয়, শুরুতেই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার সহায়তায় তা অপসারণ করা সম্ভব। তাহলে হয়তো কোনো ভাইরাল অডিও বা ভিডিও-এর কারণে  বড় কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।  তবে, ঠিক এখানেই সামাজিক মাধ্যমের দুর্বলতা রয়েছে। যেমন, ফেসবুকের কথাই ধরুন। ফেসবুকের এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এ দুর্বলতা রয়েছে। কারণ, ফেসবুক বাংলায় ফ্যাক্টচেক করতে পারে না। ফলে অনেক সময়ই দেখা গেছে এরকম ভাইরাল অডিও-ভিডিও–এর কারণে বড় ধরনের দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র বলছে, ফেসবুক ফ্যাক্ট চেকিং-এ আশি শতাংশ অর্থ ব্যয় করে পশ্চিমা দেশগুলোতে। ফলে আঞ্চলিক ভাষায় এই ধরনের সন্ত্রাস, গুজব, হিংসার চাষ চলবে। এর অভিঘাত অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি।

বিভি/রিসি 

মন্তব্য করুন: