বিএনপি-জাপা এমপিদের দাবি, শিক্ষায় চরম নৈরাজ্য চলছে
ছবি: সংগৃহীত।
জাতীয় সংসদে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি’র সংসদ সদস্যরা (এমপি) দাবি করেছেন, শিক্ষাতে চরম নৈরাজ্য চলছে। তারা বলেন, শিক্ষায় দলীয়করণের কারণে শিক্ষকদের ছত্রছায়ায় ছাত্ররা মাস্তানী করছে। তাদের দ্বারা শিক্ষকরা লাঞ্চিত হচ্ছে। যাতে করে দেশের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মঞ্জুর দাবি’র ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এমন দাবি করেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি হচ্ছে? ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেছেন ডাক্তার, প্রকৌশলী বানাচ্ছি কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি কতগুলো। দায়িত্ব তো উনিও এড়াতে পারেন না। উনিতো ঢাবির ভিসি ছিলেন, কিন্তু যার কোন পাবলিকেশন, গবেষণা, ছিলো না। ডক্টর ডিগ্রি নাই, শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হয়েছে। সমস্যাটা ওইখানে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, সেই দলের শিক্ষকদের পদোন্নতি হবে। তাদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর ছাত্রনেতারা মাস্তান হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নড়াইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লাঞ্চিত, জুতার মালা দিয়ে তাকে ঘুরানো হয়েছে। সাভারে একজন শিক্ষককে হত্যা করেছে। হত্যাকারী কিশোর গ্যাংয়ের কাছে দাদা বলে পরিচিত। পরিচালনা কমিটি তার আত্মীয়, আরেকজন শিক্ষক তাকে প্ররোচিত করেছে। যে শিক্ষক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। শিক্ষার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হাতে সিগারেট দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাতে কাপ আর সিগারেট। ছেলে-মেয়ে হাত ধরাধরি করে হাঁটাহাঁটি করছে, আর সিগারেট খাচ্ছে। এটা কোন সংস্কৃতি? কোন শিক্ষা। শুধু শিক্ষার মান নয়, নৈতিকতাও কমেছে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকেও শক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, এখন যাদের হাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গেছে, তাদের না আছে শিক্ষা, না আছে দীক্ষা। তারা শুধু বুঝে কীভাবে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিবিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১৮/২০ লাখ নতুন চাকরি প্রত্যাশী জব মার্কেটে প্রবেশ করে। তার মধ্যে দেশে বিদেশে মিলিয়ে ৫/৬ লাখের কর্মসংস্থান হয়। বাকী সবাই বেকার থাকে। এই বেকারের শিক্ষিত বেকার। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকারত্ব তৈরি করে। কর্মবিমুখ যে শিক্ষা ব্যবস্থা, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা কেন রাখবো? কেন আমরা কর্মবিমুখ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে কর্মমুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার চিন্তা করছি না।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মনিটরিং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) করছে কিনা আমরা পাচ্ছি না। এখন পিয়ন পর্যন্ত বলে আমি বিবিএ, এমবিএ। এই কি মুশকিলে পড়লাম। এটা কি শিক্ষা ব্যবস্থা? শিক্ষা ব্যবস্থায় লাগাম টেনে ধরা উচিত। ধ্বংসের পথে শিক্ষা ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন ভাইস চ্যান্সেলর দেওয়া হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপালগঞ্জ-রাজশাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়সহ এতো অভিযোগ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইস চ্যান্সেলর উনি এখন নাই। ছেলে, ছেলের মেয়ে, ভাগ্নী, ভাগ্নী জামাই যা আছে, সবাইকে বেইনিভাবে চাকরীতে ঢুকাইছে। উনি চলে যাওয়ার পরে আবার এদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর এতো সম্মানী পোস্ট। এগুলো নিয়ে যারা বদনাম করে এই শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেমন করে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে জানি না।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা র্যাংকিংয়ে আমরা কোন জায়গায় আছি? কল্পনা করা যায় ৫ হাজারের মধ্যেও নাই। ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায়, যেভাবেই থাকেন না কেন। আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ের জন্য কোন সরকারী ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এখানে গবেষণা ও প্রকাশনা নেই।
রুমিন ফারহানা বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে মানটাই সমস্যা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপের দেখা যায় শিক্ষার মানে ক্রম অবনমন। র্যাংকিংয়ে ধ্বস।
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ফাইভ পাশ করে কলেজের সভাপতি হওয়ার জন্য ডিও লেটার চায়। হোট ইজ দিস? পঞ্চম শ্রেণি পাশ করছে কি করেনি, অথচ একটা ডিও লেটার চায় কলেজের সভাপতি হওয়ার জন্য। কলেজের সভাপতি পদ থেকে যখন থেকে সংসদ সদস্যদের প্রত্যাহার দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে সভাপতি পদে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ভালো, মন্দ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন সেটি দখল করেছে।
বিভি/এইচকে
মন্তব্য করুন: