• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশ অধিদফতরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছেঃ টিআইবি’র প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ৫ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
পরিবেশ অধিদফতরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছেঃ টিআইবি’র প্রতিবেদন

পরিবেশ উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নসহ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের মুখ্য প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু পরিবেশ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন, বিধিমালাসহ সম্পূরক আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের একাংশের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অংকের নিয়ম-বহির্ভূত আর্থিক লেনদেন এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতির ফলে পরিবেশ অধিদফতরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে “পরিবেশ অধিদফতরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-টিআইবি। সেই গবেষণাটিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিদফতরের কর্মীদের একাংশের সংগে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একাংশের যোগশাজস এবং তাদের প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করার কারণে অধিদফতরের কার্যকরিতা ব্যাহত হয়েছে। অধিদফতরের কার্যক্রমে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশক অর্থাৎ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, জনসম্পৃক্ততা এবং কার্যকর সমন্বয়ে ঘাটতি রয়েছে।

সামর্থের ঘাটতি এবং সরকারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়ে বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণে ঘাটতির কারণে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এই গবেষণা প্রতিবেদনে। বলা হয়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সরকারি বিভিন্ন বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং শিল্প কারখানা স্থাপনই মূলত পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী হলেও এক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার কার্যক্রমের অংশ হওয়ার কথা থাকলেও পরিবেশ অধিদফতরের বিদ্যমান ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতা লক্ষনীয়।

আমলা-নির্ভরতা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘাটতি, নীরিক্ষায় ঘাটতি, পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি এবং অনেক ক্ষেত্রে সৎ সাহস ও দৃঢ়তার ঘাটতির কারণে পরিবেশ অধিদফতর একটি দুর্বল, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অনেকাংশে অক্ষম ও অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে বলেও তুলে ধরা হয় গবেষণায়। 

এই অধিদফতরের কার্যক্রমে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশক- যেমন: স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, জনসম্পৃক্ততা এবং কার্যকর সমন্বয়ে ঘাটতি বিদ্যমান বলেও তুলে ধরা হয় গবেষণায়।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ও তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করে টিআইবি। সেগুলো হলো-

১. আইনের যথার্থ প্রয়োগে ভয়, চাপ ও আর্থিক প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে দৃঢ়তার সাথে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং শিল্প কারখানাগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।

২. প্রেষণে পদায়ন না করে অধিদপ্তরের নেতৃত্বে বিশেষায়িত জ্ঞানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে।

৩. যথাযথ চাহিদা নিরূপণসাপেক্ষে সকল কার্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, কারিগরি ও লজিস্টিক্যাল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ওয়েবসাইটকে আরও তথ্যবহুল (যেমন নিরীক্ষা প্রতিবেদন, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে করা জরিমানা ও আদায়ের পরিমাণের ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য, সব প্রকল্পের ইআইএ প্রতিবেদন ইত্যাদি) ও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।

৫. পরিবেশ সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ত্রুটিমুক্ত পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পন্ন নিশ্চিত করতে হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিদপ্তরের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

৬. প্রকল্প বাস্তবায়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে জড়িত সকল কর্মীর বাৎসরিক আয় ও সম্পদের বিবরণী বছর শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়াসহ তা প্রকাশ করতে হবে।

৭. পরিবেশ ছাড়পত্র-কেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সংগে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি প্রদানের নজির স্থাপন করতে হবে।

৮. ইটিপি’র কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ইআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী মিটিগেশন প্ল্যান ও ইএমপি তদারকি বৃদ্ধিসহ পরিবেশগত নিরীক্ষার (এনভায়রনমেন্টাল অডিট) ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম তদারকি ও পরিবীক্ষণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও এর কার্যকর ব্যবহার করতে হবে।

১০. আইন সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবেশ আদালতে সাধারণ মানুষের সরাসরি মামলা করার সুযোগ রাখতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক আশরাফ উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার বার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।

বিভি/কেএস/এসডি

মন্তব্য করুন: