• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাবাদের মনের বাতি হচ্ছে কন্যারা

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
বাবাদের মনের বাতি হচ্ছে কন্যারা

আমার মেয়ে অরিত্রি বেশি কথার মানুষ না। কম কথার মানুষ। স্বল্পভাষি। অনেকটা আমার মতোই অরিত্রি। আমার স্বভাবের সাথে অনেক মিল। চেহারায়ও। আমার, আমার মা এবং আমার বোন সাজুর চেহারার কম্বিনেশন। মাঝে মাঝে আমি অরিত্রির কোনো কোনো ভাঙ্গিমা দেখে চমকে যাই, যেনো সাজু। খাওয়া দাওয়ায়ও আমার টাইপ। আমাদের পরিবারে যা কিছু কথা জেসমিন একলা বলে। সে বলে আমরা সবাই শুনি। জেসমিন অর্কর সাথে অনেক গল্প করে। অর্ক প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে একবার ফোন দেয়। জেসমিন সারাদিনের বৃত্তান্ত বর্ণনা করে। অর্কর বাবা কি কি দোষ করেছে সেগুলো বাদ যায় না। অর্ক এটা শুনে হাসে এবং অসীম ধৈর্য্য নিয়ে মায়ের সব কথা শোনে। সেই তুলনায় অরিত্রি কম কথা বলে। আমার মতোই হ্যাঁ, হু টাইপ। মুড ভাল থাকলে একটু বেশি কথা বলে। 


অরিত্রির সাথে আমার যেটুকু কথা হয় তার বেশিরভাগ আমি নিজ থেকে বলি। প্রতিদিন একবার ফোন দেই।
আম্মু কি করো।
কাজ করি।
খেয়েছো!
হ্যাঁ।
কি খেলা।
এই তো পাস্তা।
নিজেই করেছো!
হুম।
ভাত রান্না করো!
করি।
ভালই তো শিখছ। 
এয়ার ফ্রায়ারে করি। তুমিও শিখ।
শিখছি।
অর্কর সাথে খুব দরকারি কথা ছাড়া তেমন কথা হয় না আমার। জেসমিনের সাথে যখনই কথা বলি দুএক কথার পরই আমার ভুল ধরতে শুরু করে। যেনো ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য আমার ভুলত্রুটিগুলো খুঁজে বেড়ানো। আমিও এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই যথাসম্ভব কম কথা বলার চেষ্টা করি। বোবার কোনো শত্রু নাই।
জেসমিন এখন ঢাকায়। বিমানে গেছে। ঢাকায় পৌঁছে বিমান বাংলাদেশের প্রচুর প্রশংসা করল। কেবিন ক্রদের  প্রশংসা করল, খাওয়ার প্রশংসা করল। কোনো ঝক্কি নাই। লে ওভার নেই। একটানে পীয়ারসন থেকে শাহজালাল। ঢাকায় লাগেজও পেয়েছে ইমগ্রেশন শেষ করেই। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতেও ভুলল না। জেসমিনের প্রশংসা পাওয়া মানেই বিরাট ভাল কিছু। তবে সংশয় প্রকাশ করতেও ভুলল না। বলল, দেখো কতদিন এই ’ভাল’ থাকে।
আমরা সবাই এখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। আমি একলা বাসায়, জেসমিন ঢাকায়, অর্ক বোমেনভিল, অরিত্রি ডাউন টাউন, সাদ আটলান্টা।
অরিত্রি ম্যাকডোনালস কানাডার কর্পোরেট অফিসে চাকরি করে। ম্যানেজার কমিনিউকেশন। আজকে যেতে হয়েছিল কোনো একটা আউটলেটে। সেখানে স্টাফরা কিভাবে কাজ করে সেটা হাতে কলমে শিখতে।
কেমন লাগল কাজ!
ভালই।
পেরেছো!
হ্যাঁ। ইন্টারেস্টিং।
ছবি তুলেছো! তোমার মা ছবি পাঠাতে বলেছে।
কাজের ফোনে আছে ছবি। পরে তোমাকে পাঠাব।
অরিত্রি সবকিছু খুলে বলবে না আগে ভাগে। এই উইকেন্ডে আমাদের সাথে ছিল। সকালে বলেছে বাবা চা বানিয়ে দাও। আমি মহা আনন্দে চা বানাই। চা খেতে খেতে বলল, নভেম্বরে আটলান্টা যাব।
আমি বিস্মিত হয়ে বলি, চলে যাচ্ছ!
না। এখনই না। ডিসেম্বরে আমি আর সাদ জাপান যাব ভ্যাকেশনে।
আমিও যেতে চাই।
যাও। ঘুরে আসো। তোমার তো টোকিওতে অনেক বন্ধু আছে।
হ্যাঁ। ডিসেম্বরে প্লান আছে।
রোববার অর্কও এসেছিল। জেসমিনকে পৌঁছাতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম। পথে আসতে বলল, বাবা আমি আর খাতিজা আগামী শুক্রবার দশ দিনের জন্য কুইবেক যাচ্ছি ড্রাইভ করে। কয়েকটা সিটিতে যাব। তারপর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্ক।
তাই নাকি!
হ্যাঁ। জ্যাকসন হাইটসের একটা ভাল বাঙ্গালি রেস্টুরেন্টের নাম দিওতো।
আমি বললাম, আমিও যেতে পারি। ২৯/৩০ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসির বইমেলার ইনভাইটেশন পেয়েছি। নিউইয়র্ক হয়ে অথবা ডিরেক্ট ডিসি চলে যাব।
হ্যাঁ যাও।
আমার কোনো কিছুতে অর্ক অরিত্রির কোনো আপত্তি নাই। সবকিছুতে সম্মতি আছে। আমার মতোই ওরাও ঘুরতে পছন্দ করে। জেসমিন আমাদের উল্টো। শুধু যেখানে সিবলিংস আছে সেখানে যায়। কিন্তু না গেলেও আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। শুনেই বলল, এই না কয়দিন আগেই নিউইয়র্ক বইমেলা থেকে আসলা! এতো কি বইমেলা!
অরিত্রি যেদিন থাকে সেদিন বাসাটা  খালি মনে হয় না। অরিত্রি পুরো বাড়ি জুড়ে থাকে। কন্যারা সবসময় বাবাদের আনন্দের উৎস। তারা সেটা প্রকাশ করতে পারে না ঠিকই। কিন্তু তাদের মনের বাতিটা উজ্জল হয়ে ওঠে।

টরন্টো ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

মন্তব্য করুন: