শেখ হাসিনার মুক্তির মাধ্যমে ফিরে আসে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ। সেনাসমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৭ সালের ১৬ জুলাই) গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর প্রথমে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়।
১/১১ অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ভিত্তিহীন মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবরুদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায় তৎকালীন অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি পান তিনি। কারাগারে থাকাকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। সে সময় চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার মুক্তির জোরালো দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তোলে। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দেয়। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্তাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পেয়েই শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এরপর ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয় তাকে। একই বছর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়।
শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসে। যুগপৎভাবে বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হারানো স্বপ্ন ও সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হচ্ছে আজ তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে।
বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিতার মতোই আপসহীন মনোভাব নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে শেখ হাসিনার যাত্রা শুরু হয়। জনগণের মুক্তির আন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন। অসংখ্যবার মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নিতে অকুতোভয় নির্ভীক সেনানীর মতো নিরবচ্ছিন্নভাবে পথ চলেছেন শেখ হাসিনা। সব বাধা-বিপত্তি জয় করে আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বমহিমায় উজ্জ্বল এদেশের জনগণের নেত্রী।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ১৯ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা নেতৃবৃন্দৃ ও গণমাধ্যম নানা উপাধি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা বহ্নিশিখা। তিনি তার জীবন বাংলার মেহনতি দুঃখী মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই তার রাজনীতির দর্শন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর ১৯৮১ সালের শুরুতে দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে শুধু চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ই আনেননি, দেশকেও এগিয়ে নিয়েছেন অনেক দূর। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যেমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তিনি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে রেকর্ড সৃষ্টি করে তিনি চতুর্থ বারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পান। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থ বার ও মোট পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
লেখক: সংসদ সদস্য, ফেনী-২ (সদর) ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: